পবিত্র সারনাথ

পার্থ প্রতিম চট্টোপাধ্যায়



খ্রিষ্ট জন্মের প্রায় ছয়শ’ বছর আগের কথা। এক আষাঢ়ী-à¦ªà§‚à¦°à§à ¦£à¦¿à¦®à¦¾à¦° সকাল। খুব ভোরে কয়েক পশলা বৃষ্টির পর, বৃষ্টিস্না ত পৃথিবী, à¦¸à§‚à¦°à§à¦¯à¦¦à§‡à¦¬à§‡à ° আলোয় আলোকিত হয়ে যেন কোন এক মহান ঘটনার অপেক্ষা করছে।

কাশীর কাছের “ঋষিপত্তন⠝ বা â€œà¦¸à¦¾à¦°à¦™à§à¦—à¦¨à¦¾à ¥â€ নামে পরিচিত এক মৃগ উদ্যানে, বেশ কয়েক বছর ধরে “পঞ্চবর্গৠ€à§Ÿâ€ সন্ন্যাসী, শ্রী কৌণ্ডিণ্য, শ্রী অশ্বজিৎ, শ্রী মহানাম, শ্রী ভাপ্পাজি এবং শ্রী ভাদ্দিয়া, এক কঠিন সাধনা করে চলেছেন জীবনের পরম সত্যের অনুসন্ধানৠর à¦‰à¦¦à§à¦¦à§‡à¦¶à§à¦¯à§‡à ¤ সংসারের ঐশ্বর্য্য ত্যাগ করে এই সন্ন্যাসীঠা জীবন উৎসর্গ করেছেন কঠিন সাধনার পথে। কিছুকাল আগে অবধি আরও এক তপস্বী ছিলেন এনাদের সঙ্গী। কিন্তু বছর ছয়েক আগে তিনি বেছে নেন অন্য আর এক প্রকারের সাধনার পথ। পথ পরিবর্তনেঠকারণে এঁরা “উরুবেলায়⠝ (বর্তমানে বোধগয়া) তাঁকে ছেড়ে সারঙ্গনাথৠ‡ চলে এসেছেন প্রথাগত পথ অবলম্বন করে তপস্যার করার à¦‰à¦¦à§à¦¦à§‡à¦¶à§à¦¯à§‡à ¤ প্রায় অনেক বছর কেটে গেলো এই সাধনার, কিন্তু এই সন্ন্যাসীঠের কেউই সন্ধান পাননি সেই পরম সত্যের।

আষাঢ়ী-à¦ªà§‚à¦°à§à ¦£à¦¿à¦®à¦¾à¦° সেই পবিত্র সকালে, “পঞ্চবর্গৠ€à§Ÿâ€ সন্ন্যাসীঠের অন্যতম শ্রী কৌণ্ডিণ্য দেখতে পেলেন এক দিব্যকান্ঠি তপস্বী এগিয়ে আসছেন তাঁদের আশ্রমের দিকে। তিনি অন্যদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, “এতো সেই তপস্বী গৌতম, যে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল অন্য মার্গে সাধনার জন্য। ইনি, কেন আসছেন এখানে?” আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে এলেন বাকি সবাই। ততক্ষণে গৌতম আরো কাছে এসে গেছেন, সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তাঁর দিকে। শরীর থেকে যেন এক জ্যোতি বের হচ্ছে, মুখমণ্ডলে এক অনাবিল প্রশান্তি, চোখ ফেরানো যাচ্ছে না তাঁর দিক থেকে। বিস্ময়ের সঙ্গে তাঁরা অভ্যর্থনা করলেন গৌতমকে। এগিয়ে দিলেন আসন, ব্যবস্থা করলেন স্নানের জন্য জলের।

তপস্বী গৌতম, এই সন্ন্যাসীঠের জানালেন তাঁর আসার উদ্দেশ্য। তিনি জানালেন, “সদ্ধর্ম মার্গে” সাধনা করে তিনি “স্যমক সম্বোধি” লাভ করেছেন। উরুবেলার অধিবাসীরা তাঁর নতুন নামকরন করেছেন। তিনি এখন “বুদ্ধ” নামে পরিচিত। শ্রী বুদ্ধ, ঋষিপত্তনে এসেছেন তাঁর এই স্যমক জ্ঞানের কথা তাঁদের জানাতে। সন্ন্যাসীঠা সবিস্তারে শুনলেন বুদ্ধের এই “সদ্ধর্ম মার্গের” দর্শন। শ্রী বুদ্ধ “পঞ্চবর্গৠ€à§Ÿâ€ সন্ন্যাসীঠের দীক্ষিত করলেন এই নতুন মুক্তির মার্গে। এরপর তিনি কাশীর ব্যবসায়ীপৠত্র যশ এবং তাঁর চুয়ান্নজন বন্ধুদের দীক্ষিত করেন।


à¦ªà¦žà§à¦šà¦¬à¦°à§à —à§€à§Ÿ সন্ন্যাসীঠের দীক্ষা দান


শ্রী বুদ্ধ এঁদের তাঁর প্রথম বানী, “ধর্মচক্র-à ªà§à¦°à¦¬à¦°à§à¦¤à¦¨-সূ ¦¤à§à¦°â€ বা “চতুরার্য-ঠ¸à¦¤à§à¦¯â€ এর ব্যাখ্যা করেন। চতুরার্য-সঠ্য হল জীবনের চারটি প্রধান সত্য – “দুঃখ, সমুদয়, নিরোধ এবং নিরোধগামী মার্গ”। তিনি বলেন পার্থিব সুখ ও দুঃখ, ক্ষনস্থায়ৠ, এর থেকে মুক্তির উপায় হল “নির্বাণ”ॠ¤ আর এই নির্বাণ লাভের জন্য তিনি â€œà¦…à¦·à§à¦Ÿà¦¾à¦™à§à¦—à ¦¿à¦• মার্গ” বা “মধ্যম মার্গের কথা” বলেন। এই মধ্যম মার্গে অসংযত ভোগ এবং কঠোর তপস্যা উভয়কেই ত্যাগ করতে বলা হয়েছ। এই “মধ্যম মার্গ” গমনের জন্য তিনি আটটি পথের নিদের্শ দিয়েছেন। সেগুলি হল, “সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক সমাধি”। শ্রীবুদ্ধ বলেন এই â€œà¦…à¦·à§à¦Ÿà¦¾à¦™à§à¦—à ¦¿à¦•-মার্গ” সঠিক ভাবে অনুসরণ করলে নির্বাণের উপলব্ধি সম্ভব। (১)

ভগবান বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন ব্যাখ্যার স্থান “ঋষিপত্তন⠝ বা â€œà¦¸à¦¾à¦°à¦™à§à¦—à¦¨à¦¾à ¥â€ হল আজকের “সারনাথ”। তিনি এই জায়গাতেই তাঁর দীক্ষিত প্রথম ষাটজন ভিক্ষুদের নিয়েই তৈরী করেন বৌদ্ধ সঙ্ঘ। সেই শুরু বুদ্ধের ধর্মচক্র-পৠà¦°à¦¬à¦°à§à¦¤à¦¨-à¦¸à§‚à¦¤à §à¦°à§‡à¦° প্রচারের, ক্রমে ক্রমে সমগ্র পৃথিবীর এক বিশাল অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মানুষকে ভালোবাসার এই ধর্ম।

স্বামী বিবেকানন্ঠ¦, ১৯০০ খ্রিস্টাবৠদের ১৮ই মার্চ সানফ্রান্স িস্কোতে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেন "… বুদ্ধের ধর্ম দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। এর একমাত্র কারণ বিস্মযকর ভালোবাসা, যা মানব-ইতিহাঠ¸à§‡ সর্বপ্রথম একটি মহৎ হৃদয়কে বিগলিত করেছিল….. এই হলো সর্বশ্রেণৠর মানুষের জন্য গভীর প্রেমের প্রথম প্রবাহ - সত্য বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রথম তরঙ্গ যা ভারতবর্ষ থেকে উত্থিত হয়ে ক্রমশ: উত্তর-à¦¦à¦•à§à¦·à ¿à¦£, পূর্ব-পশ্চঠ¿à¦®à§‡à¦° নানা দেশকে প্লাবিত করেছে"।(২)

সারনাথ এই কারনেই বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মাবলম্ব ীদের কাছে এক পরম পবিত্র à¦¤à§€à¦°à§à¦¥à¦•à§à¦·à§‡à ¤à§à¦°à¥¤ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভগবান বুদ্ধের অনুগামীরা আসেন সারনাথে, যে স্থান একদিন বুদ্ধের চরণরেনূর স্পর্শে ধন্য হয়েছিল। প্রাচীন যুগে বৌদ্ধধর্মৠর অনুরাগী বিভিন্ন প্রভাবশালৠব্যক্তিরা সারনাথে নির্মাণ করান বিভিন্ন চৈত্য বা স্তুপ ও বিহার।

সম্রাট অশোক, সারনাথ দর্শনে এসে নির্মাণ করান বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ সৌধ। অশোক, অন্যান্য বৌদ্ধতীর্ঠের মত সারনাথেও এক ধর্মস্তম্ভ ের স্থাপনা করেন।(৩) সারনাথে পাওয়া ধর্মস্তম্ভ টি অশোক স্তম্ভ নামে পরিচিত। অশোক স্তম্ভের মাঝামাঝি চক্রচিহ্ন দিয়ে আলাদা করে খোদাই করা রয়েছে ষাঁড়, হাতী, ঘোড়া ও সিংহের মূর্তি। এই স্তম্ভের উপরে একসঙ্গে বসান আছে চারটি সিংহ মূর্তি। স্তম্ভটির শীর্ষে ছিল একটি বড় চক্র, যার ভগ্নাংশ পাওয়া গিয়েছিলো এই সারনাথে। এই à¦…à¦¶à§‹à¦•à¦šà¦•à§à¦°à¦Ÿà ¦¿, ন্যায়, শান্তি ও প্রগাতির প্রতীক হিসেবে জায়গা পেয়েছে ভারতের জাতীয় পাতাকায়।

সারনাথের অন্যান্য স্থাপত্যগৠলির মধ্যে à¦‰à¦²à§à¦²à§‡à¦–à§à¦¯à¦¯à ‹à¦—à§à¦¯ হল ধর্মরাজিকঠস্তুপ, প্রাচীন à¦®à§‚à¦²à¦—à¦¨à§à¦§à¦•à§à Ÿà§€ বিহারের ধংশাবশেষ, ধামেক স্তুপ, চৌখণ্ডি স্তুপ, সদ্ধর্মচকৠর-জিন-বিহার, বর্তমান à¦®à§‚à¦²à¦—à¦¨à§à¦§à¦•à§à Ÿà§€ বিহার। ধামেক স্তুপের দক্ষিন দিকে ১১তম তীর্থঙ্কর শ্রেয়াংসনঠ¾à¦¥à§‡à¦° উদ্দেশ্যে তৈরি একটি জৈন মন্দির রয়েছে।


à¦§à¦°à§à¦®à¦°à¦¾à¦œà ¿à¦•à¦¾ স্তুপ




ধামেক স্তুপ




সারনাথে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিহারের ধংশাবশেষ




à¦¸à¦¾à¦°à¦¨à¦¾à¦¥à§‡à ¦° প্রাচীন এবং বর্তমান স্থাপত্য


সারনাথে অবস্থিত সংগ্রহশালঠ¾à¦Ÿà¦¿ একটি অবশ্য দর্শনীয় স্থান। সারনাথে উদ্ধার হওয়া স্থাপত্যগৠলি দেখতে পাওয়া যায় এই সংগ্রহশালঠ¾à¦Ÿà¦¿à¦¤à§‡à¥¤ এইসব মুল্যবান স্থাপত্যগৠলির মধ্যে কয়েকটি হল, à¦…à¦¶à§‹à¦•à¦¸à§à¦¤à¦®à§à ­, একটি লাল পাথরের পূর্ণ দাঁড়ানো বুদ্ধ মূর্তি, বিভিন্ন মুদ্রায় বুদ্ধের মূর্তি, এবং অনেক অপূর্ব প্রাচীন স্থাপত্য।


অশোকস্ত ম্ভ


এইগুলির মধ্যে বিশেষ হল ধর্মচক্র প্রবর্তন মুদ্রার মূর্তি। এটি দেখলে মনে হতে পারে বুদ্ধ জীবিত অবস্থায় ধর্ম উপদেশ দিচ্ছেন। এটি à¦—à§à¦ªà§à¦¤à¦¯à§à¦—à§‡à ° মথুরা প্রস্তর ভাস্কর্যেঠ° এক অসাধারন নিদর্শন। মূর্তিটির নিচের অংশে খোদাই করা রয়েছে একটি চক্র (à¦§à¦°à§à¦®à¦šà¦•à§à¦°à§‡à ° প্রতীক), দুটি হরিন (মৃগদাবের স্মারক), পঞ্চবর্গীৠŸ সন্ন্যাসীঠের মূর্তি, ও এক মহিলা (সম্ভবত তিনি এই মূর্তিটি দান করেছিলেন) ও তাঁর সন্তানের মূর্তি। (৪) এই মূর্তির প্রতিরূপ আজ বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাওয়া যায়।


à¦§à¦°à§à¦®à¦šà¦•à§à ¦° প্রবর্তন মুদ্রায় উপবিষ্ট ভগবান বুদ্ধ



বর্তমান à¦®à§‚à¦²à¦—à¦¨à§à¦§à¦•à§à Ÿà§€ বিহার


১৯৩১ সালে বর্তমান à¦®à§‚à¦²à¦—à¦¨à§à¦§à¦•à§à Ÿà§€ বিহারটির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়। তক্ষশীলায় প্রাপ্ত ভগবান বুদ্ধের পূতাস্থি এই বিহারে রাখা আছে। মহাবোধি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাত া শ্রী অনাগারিক ধর্মপাল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনঠথ ঠাকুরকে আমন্ত্রন করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেॠ¤ অসুস্থতার কারনে উপস্থিত হতে পারেননি কবি, কিন্তু লিখে পাঠান এই কবিতাটি -

“ওই নামে একদিন ধন্য হল দেশে দেশান্তরে
তব জন্মভূমি।
সেই নাম আরবার এ দেশের নগর প্রান্তরে
দান করো তুমি।
বোধিদ্রুমঠলে তব সেদিনের মহাজাগরণ
আবার সার্থক হোক, মুক্ত হোক মোহ-আবরণ,
বিস্মৃতির রাত্রিশেষৠএ ভারতে তোমারে স্মরণ
নবপ্রাতে উঠুক কুসুমি।
চিত্ত হেথা মৃতপ্রায়, অমিতাভ, তুমি অমিতায়ু,
আয়ু করো দান।
তোমার বোধনমন্ত্ঠে হেথাকার তন্দ্রালস বায়ু
হোক প্রাণবান।
খুলে যাক রুদ্ধদ্বার , চৌদিকে ঘোষুক শঙ্খধ্বনি
ভারত-à¦…à¦™à§à¦—à¦¨à ¦¤à¦²à§‡, আজি তব নব আগমনী,
অমেয় প্রেমের বার্তা শতকণ্ঠে উঠুক নিঃস্বনি --
এনে দিক অজেয় আহ্বান।"(৫)



১ – “বৌদ্ধ ভারত” – শ্রী বিমল চন্দ্র চন্দ্র - মহাবোধি বুক এজেন্সি।

২ – ভগবান বুদ্ধ ও তাঁর বাণী - স্বামী বিবেকানন্ঠ¦ - উদ্বোধন কার্যালয়।

৩ – “বৌদ্ধ তীর্থ পর্যটন” - শ্রী মনোরঞ্জন বড়ুয়া - মহাবোধি বুক এজেন্সি।

৪ – সারনাথ সংগ্রহশালঠ¾à§Ÿ লিখিত বিবরণ থেকে সংগৃহিত।

৫ – http://tagoreweb.in/Render/ShowContent.aspx?ct=Verses&bi =FF66344F-BF40-405F-A85B-407E73D94158&ti=FF66344F-BF40-4 7DF-085B-407E73D94158

৬ - লেখায় ব্যবহৃত প্রথম ছবিটি শ্রী ঐহিক চট্টোপাধ্ঠায়ের আঁকা।


ফেসবুক মন্তব্য