ফেলে আসা চাঁদ
১।
কালকের পটচিত্রে
দেওয়াল রেখেছি
মাঝেমধ্যে সচল হয়েছে
রাত
কোমর থেকে গড়িয়ে নেমেছে
চুমুক
রূপোলি তার ঘনত্বের
কাছে আগ্রাস
চাঁদ পেতে চেয়েছি আলো
আরও আলো
তোমাকে ছেড়ে আসার পর
এভাবেই
একার ভেতর তরতরে কোলাহল
পেয়েছি
২।
ঐ যে নামিয়ে রাখলে আদর
ঢোঁক গিলে খেয়ে নিলে
জল
থালা ভরা আয়োজন সরালে
নির্জনে
এমনই চেয়েছি আমি এমন
অপরাপর
পা ধুইয়ে দেবো? কিংবা
স্নানের সরাটি
উপুড় করে ঢেলে দেবো ঘাম
ও আতর?
এসব জন্মজন্ম এসব
জ্বরের ইকুয়েশন
ঐ যে কপালের কাছে ডোবা
ছুঁয়ে আছে
অবৈধ আমি তা বৈধ করলাম
৩।
অনেক ছেড়েছি আর নয়
তোমাকে ছাড়ার আগে মরন
আসুক
এই কথা বলে চলে গেলো
মাসুক দিওয়ানা
রাস্তা বন্ধ চারদিকের
তবু চাঁদ রাতের আকাশে
গুনে গুনে পায়ের পথ
ফেলে রাখে
৪।
চোখের ভেতর চোখ রাখো
কুহু ওঠে দেখো
শ্বাসের বনে ঝড়টি
নিরাভাস
ঘন ঘন উঠিয়ে রাখছো
হাঁটু
আহ কী নরম বলে গড়িয়ে
ধরছো কাঁধ
আর গলার তন্ত্রী বেয়ে
নেমে যাচ্ছে খরগোস
প্রশ্বাস
৫।
আমাকে আমার থেকে আরও
বেশি চিনছি এখন
তোমাকে তোমার থেকে বেশি
কিছু চিনলে কী?
বাইরের স্রোত কমে গেলে
মহল গভীর
অনেক অনেক ফুট নিচে
রাখা আছে ভ্রমরীকৌটো
চাপ দাও খুলে যাবে আরেক
গোপন
৬।
কী ঘোর চকলেট! এমনও কী
হয়!
অন্ধকার গলে যায় এভাবে
অন্ধকারে!
হাতড়ে খুঁজছি আঙুল উঠে
আসছে মন্থনে
তুমিও ঝুঁকে আছো
অজন্তাডৌলে
পড়ে নিচ্ছো নিষিদ্ধের
প্রথম হ্রস্ব ই দীর্ঘ
ঈ
দূরে ডাকপাখি ডাকছে
শিসের কুয়োতে
বাঁশি নয় ঠোঁট ছুঁয়ে
আছে কামরাঙা জল
বাবা
১।
সাইকেল হেঁটে যাচ্ছে
ছায়াপথ মেনে
তোমার ছায়াটি তার ওপর
চেপে বসে
হেঁটে যাচ্ছে না না উড়ে
যাচ্ছে চাকা
দু’পাশে পিঠের তটে ঘন
দু’ই পাখনার ভাঁজ
খুব সাদা পক্ষীরাজ কেশর
গম্ভীরা
তুমি সেই অশ্বারোহী যবন
ফেরিঅলা
পাড়ি দাও তুলোমেঘ হাতে
থাকে নশ্বর উত্তাপ
২।
আমার অপেক্ষার কাছে
ঈশ্বর বসে থাকে
অপেক্ষার রঙচূড়া
কিভাবে আঁকবো বলো?
লাপিজ লাজুলি ঘেঁটে
আনলাম নীল
আর অমনি দরজা খুললো
জানলা খুললো
পুরো বাড়ি আর্তনাদ
জড়োজড়ো ধূপ
ঈশ্বর ও ঈশ্বর তোমাকে
আঁকবো কী রঙে!
বাকল এনেছি ধুনোর আকার
গন্ধের গণিত সমাধানে
খুঁটে খুঁটে এনেছি আতপ
তুমি তোমার জন্যে সাদা
ক্যানভাস তুলে নিলে
৩।
মোচড়ানো কষ্ট নিয়ে
ফিরছি সেই ঘর থেকে
সিঁড়ি ভাঙার চুরচুর
শব্দ আর
ফোফানি বুক কাঁপাতে
কাঁপাতে
ছুঁড়ে দিচ্ছে আর এক
একার ঘুড়িতে
তোমাকে ভেবেছি তোমাকেই
শুধু
তুমি কিন্তু ঝোঁকা
জানলায় জমা মুঠোকাগজ
ছিঁড়ছো
ফুটো প্লাস্টিক
দস্তানার ফাঁকে সরিয়ে
নিচ্ছো তালু
তর্জনি দাবিয়ে শরীরে
পুঁতছো বাসন্তিক কাঁটা
সময়ের ঝুলন্ত
বারান্দায় মাথা নাড়াতে
বলছে গিলোটিন
সমস্ত প্রেম ক্যারামেল
সমস্ত চাওয়াকুঁড়ি
শিউলিমাখা
ভিজতে ভিজতে আমি পথে
নামছি
আকাশ কাঁদছে কী চূড়ান্ত
ছাতার আক্ষেপে
অশৌচকালীন ডায়েরি
জানুয়ারি ২৩
সাদা কোরা থানে হাঁস
আটকে আছে
ও নিবিড় ধৌত সাদা পালক
পালক
ডাক দিচ্ছে শুনতে
পাচ্ছো না নদী?
বারান্দার লাল সিমেন্ট
পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
মাঠ গোলপোস্ট আমার
ছোটবেলা
কী ছটফটে কী ইনোসেন্ট
দেখো
তুমি আঁচল বেঁধে কুড়িয়ে
যাচ্ছো ঢেউ
ঝিনুকের ডাকনাম ফিরে
ফিরে কুসুম ডাকছো
জানুয়ারি ২৪
এতে গন্ধপুষ্পে পিতলের
থালা ভরেছে
সকালে দুপুরে ছাদে
ছড়াচ্ছি কাকজল
ঐ কতো দূরে উড়ছে তোমার
ছাপানো কাপড়
বাবা এনেছিলো পয়লা
বৈশাখে
সেসব পরিয়ে দিয়েছি
চন্দন কাঠ
শাঁখা পলা কবেই খুলেছো
সিঁথির সাদা রেখা
ঘাট ভরেছে আজ ফেনায়
ফেনায়
কেবল আগুনের কাছে
অযাচিত চুক্তিবদ্ধ
থেকে
জানুয়ারি ২৫
মাটির ঘোড়া বাঁকুড়া
থেকে আনা ছিলো
কান ভেঙে গেছে তবু
খাটের পাশে রাখা
যেন অসুস্থ তোমার শিয়রে
অক্সিজেন টিউব
স্বপ্নে জেগে উঠি আতংক
ভর করে
এই বুঝি ফেটে গেলো
প্রবল চিৎকার
অন্য সবার সঙ্গে মিলে
গিয়ে আমিও
তোমাকে একা ফেলে
বাঁচবার দৌড়ে
কী ভীষণ পাপ করে এলাম
জানুয়ারি ২৬
মুখের হাঁ টি খোলা আছে
মাছির উড়ন্তে
ডানায় সরুগলার
ফিসফিসানি
তোমার ফাঁকা চেয়ার
বিছানায় হাতিছাপ
গুজরাটি নীল চাদর এক
রয়েছে
ওদের কোন কান নেই তাই
ঘাটপাড়ানির গল্প
শোনেনি
জানুয়ারি ২৭
মুখের পানপাতায় স্থির
ঠোঁট আঁকা
এলোমেলো মাটির বুনোনি
কোষ ভরে জল তুলে দিই
যমের চৌকাঠে
আজ থেকে ওই চোখ সরবে না
পাতায়
অলংকরণঃ কল্লোল রায়
ফেসবুক মন্তব্য