১
জললিপি
বাবার চোখ থেকে ভেসে
গেলে খোয়াবগুলো—
বেড়িবাঁধের চুড়ায়
বসে— মা জলের কুলায়
সময়ের কঙ্কর কুড়ান। আর
হাঁটু ভেঙে আমরা জলের
ছাদে তুলে রাখি ভেঙে
যাওয়া সংসার। কেউ কেউ
জলের নীরব গায়ে অংকিত
করেন আমাদের মুখচ্ছবি।
তারপর পকেটে ভরে
প্রদর্শনী সূচী—
সহাস্যে খোলে দেন রাতের
দরজা।
আর আমরা মানুষ থেকে
পণ্য হতে থাকি।
২
রাতের পরাগায়ন
মাছের কান’কা থেকে নেমে
যাচ্ছে— সামুদ্রিক
ঘোড়া। আর চাঙারির ওপর
বরফের স্তুপে
পুড়ছে—পিতার পাঁজর।
এসব দৃশ্য দেখে মায়ের
চোখ থেকে নেমে আসে
আঁশটে জল। আমাদের পেট
সেই জলে মাছের মতোন ঘাই
মারে। আর মা আকাশের
দিকে কেবল চেয়ে
থাকেন।তার চোখের আয়না
ভেঙে নেমে যায়
পুষ্পকাহিনী। তার
হাতের তালু থেকে শোনা
যায় পাপড়ি পুড়া জলের
বুদবুদ।
একদিন দু:সাহসের
ব্যারিক্যাড ভেঙে
জিজ্ঞেস করলে আকাশের
কথা— মা আমাদের চোখের
দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে
তাকিয়ে থাকেন।
নিশ্চুপ।
এখন— আমরা দলবদ্ধ হয়ে
মায়ের হারিয়ে যাওয়া
জ্বিহবাটা খোঁজছি।
৩
জলপাখি সংসার
আমাদের ঘরে নদী বহে।
খরস্রোতা নদী। তার
ঢেউয়ের ভাঁজেই আমাদের
সংসার। মাঝে মধ্যে
সমুদ্রনাভির মতো
উত্তাল হলে নদীর আগুন ;
সে আগুনে মা বাসন
পুড়তেন। আর আমি তার
ভেজা আঁচলের ছিদ্র দিয়ে
দেখতাম তারাফুলের
বাগান।
আমাদের সংসারে কোনো ঋতু
ছিলো না। তাপমাত্রা
বিষয়ক আলাপ কোনো দিন
শুনিনি। কিংবা পোষাক
নিয়েও। নদীর আধভাঙা
ঢেউয়ের ভেতর,মা তার
নারী সত্তার বিশেষ অঙ্গ
গুলো তুলে রাখতেন
সিকেয়,বীজলাউয়ের মতো।
কখনও চাঁদের ধার করা
আগুন ভিজিয়ে দিলে বাবার
দেহ,ইচ্ছে মতো বীজলাউ
খুলে চেটে-পুটে খেতেন।
আর শ্রাবণের ক্লান্ত
জলে ভেঙে ভেঙে ভেসে
যেতো মায়ের বেদনার্ত
হাড্ডিগুলো।
এসব দৃশ্য এখন মনে নেই
আর। বরং জলপাখির মতো
ভেসে ভেসে ভুলে গিয়েছি
প্রাক্তন সংসার। ভুলে
গিয়েছি বিগত ঠিকানা।
অলংকরণঃ কল্লোল রায়
ফেসবুক মন্তব্য