তিনটি কবিতা

এলা বসু



উনুন

দৃশ্য - এক
উনুন কখনো অবসন্ন হয় না,
জ্বালাপোড়া লেগেই থাকে।
নিভু নিভু হলে,
হাওয়া দেওয়াই নিয়ম।
শুকনো কাঠে ও কাগজে
হাহাকার জ্বলে ওঠে লেলিহান শিখায়

দৃশ্য - দুই
"মা গো মা, কাঠ কাটিতে বেলা যায়
মা গো মা... "
ভাত নামল? ও বৌমা!
কেডা কাঁদে? খোকা নাকি?

দৃশ্য - তিন
ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করলে,
কাজল পরা বারণ।
চোখ কথা বললে, সিঁদুর অবনত হয়।
রূপোলি ভাত নামিয়ে গমরঙা হাত
খোকা আগলায়।

দৃশ্য - চার
আধখানা চাঁদ আঁচল সরার অপেক্ষায়
তেষ্টায় বুক শুকায়
তেষ্টায় বুক শুকায়



সুঁচ সুতো উপসর্গ উপশম


১) রাত যতই জনপ্রিয় হয়
চাঁদের সাথে দূরত্ব বেড়ে ওঠে
ঘোমটা খুলে জ্বলন্ত তারারা টুকি দেয়
আঁচলে জং ধরা চাবি সাথ ছাড়েনি তখনও

২) ডিপ্রেশন একটা ঢালু জমি
নেমে যাওয়া প্রিয় অভ্যেস
অনিশ্চয়তায় ডুবে যাওয়া প্রাচীন আরাম
নিজের সাথে এত ঘনিষ্ঠ সহবাসের পরে
কে আর মুক্তি চায়?

৩) সংখ্যাতত্ত্ব যতখানি, ততটাও জটিল ধাঁধা
ছিল না হররোজ তোমার উঠোনে
নিজেই অশুভ হাওয়ায় অশরীরীর মতন
কেঁপে কেঁপে উঠেছি অশনি সংকেতে
কালো বিড়াল রাস্তা কাটে ভিজে রাতে
৪) দুই হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে অনাহূতের প্রতীক্ষায়
ও কে?
আমার আগামী শোকসন্ততি?

৫) আধা আধুরা সম্ভাবনা মেখে পথ কবুল করে
সুঁচ সুতোর নিহিত উপসর্গময় "আমিই বিপথ"

অতএব,
ব্যথা উপশমের প্রসঙ্গে সেই তুমিই এলে!



প্রস্তাব

অদ্ভুত সব কষ্ট
একটা আরেকটার পিঠে ব্যালান্স করতে করতে অবিকল এক পিরামিড।
প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় উদ্যত সাপের ফণার মতন " না " এক ভাসানের হাতছানি!

সাতমুখো যন্ত্রণা একুশখানা ফর্দ ধরিয়ে
রাতবিরেতে কলঘরে পাঠায়।
জল পড়ে,
গলে পড়ে
আগুন আগুন অপমান মোমবাতি বেয়ে।

নিষিদ্ধ কামনা ছেড়ে পা টিপে টিপে এসে,
শুয়ে পড়ি ঘুমন্ত সন্তানের পাশে ভাঁজহীন।
ফ্যাকাশে পাশ বালিশ হাই তোলে বিছানায়
নপুংসক রাত ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টায়

অলংকরণঃ কল্লোল রায়

ফেসবুক মন্তব্য