বৃষ্টিসকালের
কোলাজ
নিম্নচাপ এসে গেলে জল
ঝরে সে’কথা তো জানা
তবু সকালের ছাদে কবুতর
খেয়ে যায় দানা
ফের ভিজে যাবে ভেবে ভয়ে
কাঁপে না শুকোনো শাড়ি
কার্নিসে কিছু রোদ মেঘ
ভেঙে করে পায়চারি
খবর কাগজ হাতে জেগে ওঠে
চায়ের দোকান
ধোঁয়াওঠা কাপ মানে
পাতা খুলে পাঠ টানটান
বাজারে যাবার মুখে ধরা
পড়ে পকেটের ফুটো
একখানা আলু চাই তার
সাথে চাল একমুঠো
সে’টুকু জোগাড় হলে হাঁপ
ছেড়ে মেজাজটি ফ্রেশ।
এইবার মেঘদূত। জীবনের
যতটা আয়েশ।
তোমার লাভের গুড়
পিঁপড়েরা খেয়ে যায়
রোজ।
এমন খবরগুলি কোনওদিনই
ছাপে না কাগজ।
পাললিক
খনিজ জীবন থেকে উঠে আসে
অপচয় স্মৃতি
জমাট অন্ধকার, জীবাশ্ম
জমে জমে… স্তুপ
আঁধার মানিক কেউ সে'রকম
দেয় না বিবৃতি
যে'টুকু যা চাঁদ ছিল, আলো
মুছে ডুবে গেছে চুপ।
সময় বুদ্বুদেরা চিনছে
না একে অন্যকে
শেওলার পিচ্ছিলতা ঢেকে
দিল সব পরিচয়
ভুলে গেছি একদিন আলো
ছিল অন্ধদের চোখে
পাললিক শিলাজন্ম ভুলে
গেছে সমূহ প্রণয়
কী যেন কী সব কথা দেওয়া
ছিল রাখা হয়নি যা
এখুনি আসছি বলে কাকে
যেন পথপাশে রেখে
আবেগ নিপুণ হাতে তারপর
নিজের কলিজা
উপড়েছি… তা জেনেও
ভালোবেসে গিয়েছিল কে
কে।
খনিমুখে দেখা হলে তারই
কিছু মনে পড়ে ক্ষীণ
গভীরে অনেক নীচে শুয়ে
আছে আবাদজমিন।
গন্তব্য
প্রম্পটারের নির্দেশ
মত ডান হাত এগিয়ে
দিয়েছি সামনে
এ’বারে সেই ঐতিহাসিক
করমর্দন ঘটবে,
যদি আকাশ-গঙ্গাকে একটা
পথ বলা যায়
বিনা মহড়ার এই পথ নাটকে
আমরা বিনিময় করব বহু
ঈপ্সিত শক্তিসন্ধানী
আমাদের জ্ঞান ইতিহাস ও
উন্মেষ
এই প্রথম বার আমরা
খুঁজে পেয়েছি তাদের
বহু আলোকবর্ষ পেরিয়ে
তারাও
দু’পক্ষের মহাগণকেরা
একমত হয়ে তৈরি করেছে…
আসন্ন নাটকের
স্ক্রিপ্ট আর সংকেতের
ভাষারীতি
প্রম্পটার ঘন ঘন
গলাখাঁকারি দিচ্ছে
তবু জানা নেই কেন
মুখোমুখি অভিনেতা তার
ডান হাত না বাড়িয়ে মেলে
দিয়েছে বাম হাত
এই অবাধ্যতা স্তম্ভিত
করে দিচ্ছে চারপাশে
ঝুঁকে ভিড় করা
নক্ষত্রদের
সে কি জানে না… কাকে ডান
হাত বলে?
সত্যিই সে কি জানে না
ডানহাত কখনও বাঁহাতের
সাথে ভাব করতে পারে না?
সত্যিটা জানা যাবে আর
কিছুক্ষণ বাদে
বস্তু দিয়ে তৈরি আমার
ডান হাত বিসদৃশ ভঙ্গীতে
ধরবে ওই প্রতিবস্তুময়
বাঁহাত
শুনে অবাক লাগলেও আদতে
সে যাকে ডানহাত বলেই
জেনেছে।
আর কিছুক্ষণ বাদে
বন্ধুত্বের তর্জনী
ছোঁবে তর্জনীকে
বস্তু আর প্রতিবস্তুর
শক্তিসন্ধানীরা
মিশে যাব আমাদের শেষ
গন্তব্য... সেই
শক্তিতেই।
নির্বাসিত
রঙ চেয়েছিলাম তোমার
কাছে
সেই অপরাধে আমাকে
নির্বাসন দিলে
বর্ণালীর দেশে
আমার নির্বোধ চোখ সাত
রঙ আলাদা করত তরঙ্গের
মাপ গুণে
এখানে এসে বুঝেছি রঙ তো
আসলে অসংখ্য অগণন
আসমানি পাল্টাতে
পাল্টাতে খুব ধীরে মিশে
যায় সবুজ দিগন্তের কোলে
কমলা পায়ে পায়ে হেঁটে
যায় জবাকুসুমসঙ্কাশ
সকালের কাছে।
বর্ণালীর এ’দেশে কোনও
পাসপোর্ট ভিসা নেই...
কাঁটাতার নেই…
শুধু দেখবার চোখ চাই,
এখন আমি রামধনুর গায়ে
হেলান দিয়ে বসি
তুমি আমাকে জন্মান্ধ
জেনে পাঠিয়েছ এখানে
তবু সেই তোমার কাছেই
চেয়ে নিই
অবলোহিত-পরাবেগুনি
দেখবার চোখ
ইজেলে ঢালি ছবি আঁকবার
দৃশ্য আর অদৃশ্য রঙ
নশ্বর এক জীবনে চেয়ে
নিই
অনন্ত সময়ের কালো
ক্যানভাস
যেখানে অপটু তুলিতে খুব
যত্নে আঁকব তোমার প্রায়
ভুলে যাওয়া মুখ
বইমেলা
প্রত্যেকটি দিনই যাবো,
কৌতূহলহীন
নিছক অভ্যাসবশে মুখ
থেকে মুখে
অপরিচয়ের আলো সরে সরে
যাবে…
পায়ে পায়ে ধুলোমাখা
কোলাহল… ভিড়
মানুষ না, অবিকল
পরিযায়ী পাখি
ঋতু মেনে মনোহারী পালক-
বিভায়
ছররা অস্ত্র নিয়ে উদাস
শিকারি
চাঁদের কলঙ্ক খুঁজে
নিশানা সাজাবে
বিরাট শহর থেকে
অশ্বারোহী দল
কিছু নদী উপনদী মফস্বল
গ্রাম
এ’খানে পরশমণি, নিছক
নুড়িও...
যাচাইএর লোহা নেই।
কুড়োব না তাই।
অবিন্যাসে বসে থাকা…
বিপ্রতীপ কোণে
তুমি এসো। দেখা হবে।
কবিতা হবে না।
অলংকরণঃ কল্লোল রায়
ফেসবুক মন্তব্য