বাইশবাঁকির চাঁদ/৬
বাহান্ন সিঁড়িতে বসে
শাস্ত্র পাঠ করে
তীর্থের কাকের মত
অপেক্ষা করে বসে থাকব
এমন হরিহর আত্মা আমার
নেই। গঙ্গাজল দিয়ে
গঙ্গাপূজা করে নিজের
সমস্ত পাপ লোকচক্ষুর
আড়ালে ধুয়ে সাফ করে
দেবো এমন ধৃষ্টতাও আমার
নেই। তোমাকে ভুলে
যাওয়া আর চড়ুই পাখির
আচমকা হারিয়ে যাওয়া
দুটোই সমান। বাংলা
সাহিত্যে কে কোকিল আর
কে কাক এটা যারা বুঝতে
পেরে গেছে অহেতুক সময়
অপচয় করে তাদের আর
পূণ্যস্নানের দরকার
হবে বলে মনে হচ্ছে না।
এই লকডাউনের দিনেও
নির্লজ্জের মতো নদীতে
ঘাই ফেলে যেভাবে বসে
আছো, দেখে তোমার মুখে
থুতু দিতে ইচ্ছে করছে।
প্রবাহমান ঝড়ের মুখে
দাঁড়িয়ে সামান্য
ভুলে যে নাবিক
হারিয়েছে দিশা তাকে যে
তুমিই ঠকিয়েছো এই চরম
সত্য কথাটুকু যেদিন
জেনে ফেলবেন স্বয়ং
কবিতার ঈশ্বর তখন
নিজেকে কোথায় লুকাবে
তুমি? বাহান্ন সিঁড়িতে
বসে শাস্ত্র পাঠ করলেও
এই জীবনে তোমার আর
পূণ্যলাভ হবে না।
ক্ষমার সমস্ত রাস্তাই
তুমি অতিক্রম করে
ফেলেছো।
বাইশবাঁকির চাঁদ/০৭
সংস্কৃতি তার প্রথম
পরিচয়ে নম্বর দিয়ে
বলেছিল যোগাযোগ করতে।
সেই প্রথম কোনো মেয়েকে
নিজের থেকে নম্বর দিতে
দেখে একটু বেশি অবাক
হয়েছিলাম। ওর
প্রোফাইলে গিয়ে তাই
ঘুরে ফিরে দেখলাম। আসলে
প্রোফাইল নয়,ওর সমস্ত
শরীর উল্টে পাল্টে
দেখেছিলাম। মাঝে মাঝে
শরীরের বেশকিছু
জায়গায় অবাধে ছুঁয়ে
ফেলেছিলাম। আবার কিছু
কিছু জায়গায় হাত দিতে
গিয়ে ভয়ে হাত কেঁপে
উঠেছিল। ও কি জেনে
ফেলেছিল আমার এই
অসভ্যতামী গুলো! আমার
হাতের ছোঁয়া পেয়ে ওর
কি একটুও খারাপ লাগেনি!
যদি ভালো লেগেছিল তাহলে
ও কেন আমাকে একবারও
জড়িয়ে ধরল না! এসব কথা
যত মনে হচ্ছে সংস্কৃতি
ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে
আমার থেকে। এই আর্থিক
মন্দার বাজারেও,
অনাহারে, অর্ধাহারে
বেঁচে থাকা প্রাণীকূল
কিংবা ব্যর্থ প্রণয়
সম্পর্কিত ভারতবর্ষের
মন্দা অর্থনীতি নিয়ে
ওকে আমি কিছুই জানাইনি।
কিভাবে ছারপোকার মত
দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে
বেকারত্ব,খুন, ধর্ষণ
এসব নিয়েও কিচ্ছুটি
বলিনি। কলকাতার দূষণের
মাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে তো
নয়ই। যতটুকু জেনেছি
বর্তমানে স্বামী এবং
মেয়েকে নিয়ে সে সুখে
আছে। ওর সাথে কোনোদিন
দেখা হলে শুধু এটুকুই
বলবো___ ওর মত এক
বিবাহিতা মহিলাকে
ভালোবেসে দুটো কবিতা
লিখেছিলাম বলে স্বয়ং
কবিতার ঈশ্বরও আমাকে
অস্বীকার করেছেন।
সন্দেহের বশবর্তী হয়ে
উনি আমাকে তিলে তিলে
শেষ করে দিয়েছেন। যদি
কখনো দৈব্যক্রমে আবার
দেখা হয় আমাদের সেদিন
জানিয়ে দেবো
এইসবকিছুই___ জানিয়ে
দেবো ময়নার
উড়ালপুলের মত ছিল
আমাদের সেই প্রেম।
কুকড়াহাটির লঞ্চ
সার্ভিসের মত
পারাপারের তাগিদ
দুজনেই ছুটে গেছি এপার
থেকে ওপারে। আমাদের
প্রথম দেখা হয়েছিল
"মৃত্যু পরবর্তী
প্রার্থনা"-য়।
অলংকরণঃ অরিন্দম
গঙ্গোপাধ্যায়
ফেসবুক মন্তব্য