জলে ভিজিয়ে রেখেছি,
রসুনগুলো একটু ছাড়িয়ে
দাও তো।
-- আরে, আমার এখনও
সম্পাদকীয়ই লেখা
হয়নি।
--উফ্! আজ লাইভ হওয়া, কাল
সম্পাদকীয় লেখা! তবে
দ্যাখো, আর যাই লেখ,
সম্পাদকীয় লিখতে বসে
করোনায় কী করা উচিত না
উচিত তাই নিয়ে
প্যাঁচাল পেড়োনা
প্লিজ।
--বেশ।
না, কোনো কাল্পনিক
সংলাপ নয়। ২রা মে'র
সকালের এ এক বাস্তব
বাক্যবিনিময়। যেমন
বাস্তব গত পনেরোই মার্চ
'বেকেট অ্যান্ড
কোলম্যান'-কে দেওয়া
আমার চেক। সারা
বছরের.জন্য 'টাইমস অফ
ইন্ডিয়া'-র অগ্রিম
মূল্য। সকালে ঘুম থেকে
উঠেই সদর দরজা খুলে যে
খবরের কাগজটি হাতে না
পাওয়া পর্যন্ত দিন
স্বাভাবিক হতো না। এখন
নিজের ফ্ল্যাটের সদর
দরজার হ্যাণ্ডেলে হাত
লাগানোর জন্যও কত না
বিধিনিষেধ! এখন সকালে
এক ডজন কাগজের পিডিএফ
চলে আসে নানান হোয়াটস
অ্যাপ গ্রুপের
মাধ্যমে। কলকাতার
নার্সিংহোমে একজন
অত্যন্ত কাছের বৃদ্ধ
আত্মীয় মৃত্যুর সঙ্গে
নিঃসঙ্গ লড়াই করছেন, আজ
আর তার পাশে গিয়ে
দাঁড়ানোর কোনো উপায়
জানা নেই।
যতই লিখি এটা করোনা
সংখ্যা নয়, যতই ভাবি
সম্পাদকীয়তে করোনা
নিয়ে প্যাঁচাল পারবো না
তবু এই সব কিছুই তো
করোনা সম্পর্কিত। এই
এক বাটি ভিজে
শ্বেতশুভ্র-রসুন
নিরাবরণ করার আদেশ, এই
চেক দিয়েও দেড় মাসের
বেশি খবরের কাগজ না
পাওয়া, এই যে জীবন মরণ
সমস্যাতেও কোথাও যেতে
না পারা এসবই কি
করোনার কারণে নয়? করোনা
কি দূরত্ব শব্দটার
মধ্যের অক্ষরগুলোকেই
আমাদের চিনিয়ে দিচ্ছে
না এক নতুন চেহারায়?
শব্দটাই যেন অভিযোজিত
হয়ে যাচ্ছে এক
পরিবর্তিত অর্থে! এক
তরুণ কবি-সম্পাদক
বন্ধু বলছেন করোনা
পূর্ববর্তী সময়ের থেকে
করোনা পরবর্তী সময় তার
সমস্ত বৈশিষ্ট্য-চিহ্ন
নিয়ে একদম আলাদা হয়ে
উঠবে। উঠবেই। গতকাল
একজন অভিনেতা বন্ধু
ফোনে বললেন, আমরা নাকি
আবার ফিরে যাচ্ছি
সত্তর দশকের সমাজে।
সত্তর দশকের সমাজে? কেন?
করোনা কি সাড়া পৃথিবী
জুড়ে শক্তি ভারসাম্যে
আবার নাড়াচাড়া শুরু
করে দিল সেই সময়ের মতো?
এখন তো কোনো কিসিংগারের
পিকিং বা বেজিংএ গোপন
ভ্রমণ সম্ভব নয়!
তথাকথিত যুদ্ধ ছাড়াই
কি আবার এ দুনিয়ায়
অর্থনৈতিক অসন্তোষ
তীব্র হয়ে উঠতে চলেছে
সেই দশকের মতোই! আজকের
পরিস্থিতিও কি চাগিয়ে
দিচ্ছে সেই দশকের জরুরী
অবস্থার স্মৃতি! জানি
না।
কত সহস্র বছর আগের
আলতামিরা-গুহাচিত্রের
দিন থেকে আজকের এই ওয়েব
ম্যাগের দিন, এর মধ্যে
ঘটে গেছে মানব সভ্যতার
কত শত বারের উত্থান ও
পতন। কখনো মানুষের
প্রত্যক্ষ সক্রিয়তায়
কখনো বা সম্পূর্ণ
প্রকৃতির অভীপ্সায়।
মানব সভ্যতাও যেন
সিসিফাসের সেই জগদ্দল
যা ধাক্কা দিয়ে দিয়ে
বারবার তোলা হচ্ছে এক
চূড়ায় আর বারবার তা
গড়িয়ে পড়ছে যাত্রা
শুরুর সেই আদি
অবস্থানে। শুধু ভাবি,
আমরা এই মুহূর্তে কি
গড়িয়ে পড়ছি, না কি আসলে
এক নতুন উচ্চতায় উঠছি,
যে শৃঙ্গে দূরত্ব
শব্দটি যেন জয়পতাকার
মতো উড়ছে এক নতুন অর্থে
রঞ্জিত হয়ে! এরও উত্তর
আমার নিশ্চিত করে জানা
নেই। তবে এক নতুন
দুনিয়ায় প্রবেশের
বাঁকে যে এসে
দাঁড়িয়েছি, তাতে আর
কোনো সন্দেহ নেই। তবু,
জীবন তার নিজস্ব
চরিত্রেই চলিষ্ণু।
আজও সে খুঁজে নেবে তার
মতো করে সব বাঁক পেরিয়ে
যাওয়ার রাস্তা। যত
সংকটই আসুক জীবন
নিশ্চয়ই বলবে,
চরৈবেতি!
এই সংখ্যায় লেখা এসেছে
প্রচুর। আগে বম্বেDuck-এ
লেখেননি এমন অনেকের
লেখাও আমরা পেয়েছি।
পেয়েছি অরুণাচল দত্ত
চৌধুরীর একগুচ্ছ
কবিতা। গুরু নানককে
কেন্দ্রে রেখে জয়া
মিত্র খুঁজেছেন পাঁচশো
বছরের পথ হাঁটা। পেয়েছি
ভাষাবিদ পবিত্র
সরকারের সাক্ষাতকার
ছাড়াও তাঁর নিজের হাতে
লিখে দেওয়া একটি ছড়া-
করোনা নিয়েই।
এবার গল্পের সংখ্যা
একটু বেশি -- দশটি। এই
আবশ্যিক ঘর-বন্দিদশার
অবসরে সব রকমের পাঠকের
কথা মাথায় রাখা হয়েছে
গল্পগুলো নির্বাচনের
সময়। নববর্ষ সংখ্যা
বলেই এই সংখ্যায় একটু
বিশেষ যত্ন নেওয়া
হয়েছে অলংকরণে।
অরিন্দম
গঙ্গোপাধ্যায় করেছেন
প্রচ্ছদ ও কবিতার
অলংকরণ। হৈহৈ করে যার
যার ঘরে বসে অন্য
বিভাগগুলির অলংকরণ
করেছি আমরা-- কল্লোল
দত্ত, সিদ্ধার্থ
মুখোপাধ্যায়, তস্য
কন্যা অরুণিতা এবং আমি
নিজেও।
ঐ যে বলছিলাম না, দূরত্ব
শব্দটার অর্থই পাল্টে
যাচ্ছে। টিম বম্বেDuck এই
সংখ্যা প্রস্তুত করেছে
যথারীতি এক নিবিড়
যৌথতায়, দূরত্বকে
এতটুকু মেহসুস না
করেই।
আশাকরি প্রিয় পাঠকদের
সঙ্গেও বম্বেDuck-র কোনো
দূরত্ব তৈরি হয়নি।
সবাইকে নতুন বছরের
প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন। সুস্থ
থাকুন। সবাইকে সুস্থ
রাখুন।
অলংকরণঃ অরুণিতা
মুখোপাধ্যায়
ফেসবুক মন্তব্য