ডিসক্লেইমার
এ লেখা আমার নয়, এই মিছে
বসন্ত-ডায়েরি
জন্মান্ধ হকার আমি,
রাজপথে করিনি তা ফেরি।
অন্যদের মুখে শুনি,
কৃষ্ণচূড়া-শিমূল-পলাশ
খুব গাঢ় লাল রঙ, যে রকম
গুলিবেঁধা লাশ।
কিছুটা সময় গেলে, এও
শুনি... রক্ত কিম্বা
ফুলও
কালচে মলিন হয় মেখে
নিয়ে অবহেলা-ধুলো।
বিশ্বাস করুন, এই এত
ফুল... এত সব লাশ
এ সব দেখিনি চোখে। এ রকম
বসন্ত বিলাস
আমার অযথা ভীরু জন্ম
অন্ধ সওদার মাঝে
খুবই বেমানান আর লাগেও
না দিনগত কাজে।
এখন বসন্ত কাল। বয়ে আসা
মলয় বাতাসে
কোকিলের কুহুরব,
মুকুলের গন্ধ ভেসে
আসে।
চারিদিকে উৎসব যা
বোঝেনি শ্রমিক ও চাষিটি
ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে
সম্রাটের প্রেম-মাখা
চিঠি।
জন্মান্ধ আমি চিনি
সিঁড়িগুলি লাঠি ঠুকে
ঠুকে।
বিশুদ্ধ শিল্পমাখা
প্রেমিকার বিমূর্ত
চিবুকে
বিষণ্ণতা লেগে থাকে।
প্রেমিকের অবোধ্য
প্রলাপ
কতখানি প্লেটোনিক,
কতখানি দেহের গোলাপ...
এই সব নিরাপদ কথকতা
আমার ঝোলাতে।
ফুল ঝরে এ স্বদেশে লাশও
ঝরে পড়ে দিনে রাতে।
বিশ্বাস করুন স্যার,
নিজেকে তো কিছুটুকু
চিনি!
জেনে বুঝে কোনও কুৎসা
আপনাকে কখনও বেচিনি।
তবু সতর্কতা ভালো।
বসন্ত যত দিক দোলা
ভুল না গছায় যেন
বসন্তের অন্ধ
ফেরিওলা।
সবেধন নীলমণি
মাননীয় সবেধন
নীলমণিবাবু
তুমি যে রয়েছ, এ'টা বৃহৎ
ভরসা
বহুকাল পরিশ্রম করে
আমাদেরই কাটা খালে
নীলকান্ত মণি তুমি
মায়াবী কুমির
চক্কর কাটলে বাইক
বাঁশবাগানের ঠিক মাথার
ওপর
গোল চাঁদ উঠে আসে
হাড়ে হাড়ে বুঝে যাই
শোলোক বলার সেই দিদিটি
কোথায়
ভীতু আমি আছি বলে
তুমি আছো প্রিয় নীলমণি।
হাত ধরো।
মোড়ে মোড়ে ফ্লেক্স ঝোলা
টুনি সুশোভিত রাজপথে
হাত ধরে হাঁটি চলো
আশ্চর্য প্রেমিক
ঘন ঘন তোপধ্বনি হোক
কুঞ্জবন ঢেকে যাক পেটোর
ধোঁয়ায়
ছোটো ছোটো ঘটনায়… বড়
উৎসবে
লিপিবদ্ধ হোক প্রেমকথা
পাঁজর গুঁড়িয়ে দাও আদরে
সোহাগে
চাওয়া না চাওয়ার কোনও
ধাঁধাঁকুয়াশায় নয়
চিরকুটে সাট্টার মত,
খুচরোয় বাট্টার মত
মৌরসিপাট্টার মত
করুণ ঠাট্টার মত
অকারণে ভালোবাসো, চির
অবধারিত হও…
যেন তেন প্রকারেণ
আমাদের স-বেদন সবেধন
প্রিয় নীলমণি।
বিচ্ছিন্ন
অনন্তকাল ছুটছে... তেমন
দাবিটি নেই আর কিছুতে
সমান্তরাল দুইটি রেখা
পরস্পরকে চাইছে ছুঁতে
পেরিয়ে যাচ্ছে লেভেল
ক্রসিং, তেপান্তর আর
পেরোয় সাঁকো...
পরস্পরের দুরত্বটাই...
হায় জীবনে পেরোয়
নাকো।
যেমন নিয়ম জোয়ার ভাটা
চন্দ্রকলা সূর্য ওঠা...
সেই নিয়মেই বজায়
থাকছে ওই দুজনের
দূরত্বটা
তাদের রকমসকম দেখে
স্টেশনগুলো মুচকি
হাসে
মিলনবিহীন... কিন্তু
তারা পরস্পরকে
ভালোইবাসে
জংশনে আর হল্ট স্টেশনে
জিরোয় ওরা হাঁপিয়ে
গেলে
মনের ভুলেও যাচ্ছে না
কেউ একজনে অন্যকে
ফেলে।
একটু খেয়াল করলে পরে
আমরা আমরা সবাই বুঝতে
পারি
সমান্তরাল লাইন দুখানা
জন্ম থেকেই
স্বেচ্ছাচারী!
লোক দেখানো এই বিচ্ছেদ
যখন সবার মনকে ভেজায়,
পরস্পরকে ছোঁবে বলেই
নিলাজ দুজন দিগন্তে
যায়।
অ-মৃত
দমচাপা হাওয়া মেখে
আনাগোনা করে নিশিডাক
জাহাজের খোঁজে গেছে
অসফল আদার ব্যাপারি
ফুলস্পিড সামলিয়ে
ব্রেক কষে বেপরোয়া
ট্রাক
বড় রাস্তায় ঘোরে
পুলিশের ক্ষুধার্ত
গাড়ি
প্রেমহীন এ'শহর। কবিতার
দারুণ প্রবাসে
হ্যালোজেন মাঝরাতে ভোর
ভেবে উড়ে আসে কাক...
এ'সব দৃশ্য ছেড়ে সে
ভেবেছে ভারি অনায়াসে
রাইগর মর্টিস কাকে বলে
শিখে নেওয়া যাক।
প্রাণ আছে নাকি নেই,
সে'খবর কেউ জানতো না।
দরজা খোলাই ছিল,
ভ্রুক্ষেপ নেই কারও
কোনও।
শুধু পিঁপড়েরা এসে
মৃতদেহে ঢালে
সান্ত্বনা,
সারি বেঁধে খুঁটে খায়
আঁধারের গালভরা ব্রণ।
এলোমেলো চালচুলো
কবিতায়…প্রাণে…গাঢ়
প্রেমে,
সমস্ত ফেলে তার বডি যায়
পোস্টমর্টেমে
প্রত্যাবর্ত
ক্রিয়া
১)
অনীশ
নেহাতই ইচ্ছের দোষে
তোমাদের এই স্বর্গে
এসে
নির্ভেজাল ফেঁসে গেছি।
পারিজাত ফোটা এই দেশে
একেবারে বেমানান তবু
আমি যত্নে খুঁটে খুঁটে
রূপহীন বনফুল লাগিয়েছি
কাঁটার মুকুটে।
ভিতটুকু নড়বড়ে।
গাঁথুনিতে
পল্লবগ্রাহীতা।
অধ্যবসায়হীন ফাঁকি ভরা
জীবনসংহিতা।
এ'টুকু সম্বল নিয়ে
তোমাদের স্বর্গে এসে
ঘুরি।
বিদ্বান বিদুষী যারা,
সহজেই এ'সব চাতুরী
ধরে ফেলেছেন। গাঢ়
কটাক্ষে তিরস্কার
লিখে
চিহ্নিত করেছেন এই
অনুপ্রবেশকারীকে।
ঈশ্বরকে না মেনেও
ঈশ্বরের
প্রতিবিম্বগুলি
নিছক অপটু হাতে এঁকে
যায় অশিক্ষিত তুলি।
যে রকম এঁকেছিল…
গুহাপর্বে আলতামিরায়
পূর্বনারীপুরুষেরা।
আজও এই ধমনী শিরায়
তাদেরই বন্য রক্ত ভয়
প্রেম ঘৃণা ক্রোধ
স্নেহ।
পাথরদৃষ্টি দিয়ে
দয়িতকে অযথা সন্দেহ।
সমস্ত আগের মত। সয়ে
যাচ্ছি কুয়াশা জীবন।
তোমাদের এই স্বর্গে ভুল
করে এসে অনুক্ষণ
টের পাই চাঁদ সূর্য
নদীজল জোয়ার ভাঁটায়
মরুভূমি পাহাড়েও কে যেন
কে খবর পাঠায়
আমাদের ভুলে যাওয়া
এককোষী জননীর নাম।
আমারই মতন মূঢ় মেধাহীন
যাদের প্রণাম
সূর্য খুঁজত রোজ।
মৃত্যু ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বেঁচে থাকা
আজও প্রিয় গ্রহটিতে
ওড়াচ্ছে প্রাণের
পতাকা।
প্রতিবর্ত ক্রিয়া বশে
এই বাঁচা। এ'নয় সঠিক।
তবু সে'ভাবেই বাঁচি।
আজও নই তত নাগরিক।
একমনে খুঁজে যাই কী
কারণে বাঁচা এত প্রিয়।
না পাচ্ছি যতদিন,
স্বর্গবাসী সহ্য করে
নিয়ো।
২)
নিয়তিবিদ্ধ
ফাৎনায় টোপ ঝোলে, বোকা
মাছ করে তা' জরিপ
জানেনা সে এরপরে সুতো
আছে, জেগে আছে ছিপ।
আসলে টোপের সাথে তার যত
গোপন প্রণয়
প্রতিবর্ত ক্রিয়া মেশা
যতকিছু লোভ আর ভয়
জলজ বাসনাগুলি তাকে
ঘিরে ফিরে ফিরে আসে
ঢেউ তোলে, জড়ো হয় বোবা
চেতনার চারিপাশে
খিদের প্রবল টানে, নেমে
আসে অতিপরিচিত
কীটময় পাপ দৃশ্য, সেই
স্বপ্ন যা অবলোহিত
আলোর বিস্তার যেন, তাকে
টানে নিয়তির দিকে
জন্মছকে মৃত্যুদিন
লেখা হয় গোপন তারিখে
৩)
ভীরু
আসলে সাহস নয়, যা রয়েছে
প্রতিবর্ত ক্রিয়া
গাছের সবুজ খুঁজে যে
রকম মিশে যায় টিয়া
যেমন জলের মাঝে তিরতিরে
ছায়া ভাঙা ভাঙা
দেখেই জীবনটাকে ছোঁ
মেরে তুলেছে মাছরাঙা
সে’ রকম বেঁচে থাকা। এর
থেকে বেশি কিছু নেই
আমাদের গল্পটিতে।
কোনও মতে এ’টুকু শুনেই
উঠে পড়ে শ্রোতাগণ।
বরঞ্চ টিভি সিরিয়াল
অধিক রোমাঞ্চপূর্ণ।
তা’ নইলে আইপিএল…
স্কচ।
মধ্যবিত্ত জীবনেরা এই
ভাবে সতত খরচ
হয়ে যেতে ভালোবাসে। সুখ
বেচে কিনে নেয় দেনা।
চিরুনি তল্লাসি চলে।
হত্যার প্রমাণ মেলে
না।
সামর্থ্য পেরিয়ে যায়,
প্রত্যাশাও,
যা ছিল বিপুল।
কুঁড়ি জীবনের পরে ঝরে
গেছে প্রতিবন্ধী ফুল।
জোনাকি না ঢোকা এই
ডার্করুমে ঘুম জড়ো করি
অবচেতনায় শুধু ডাকে এক
নিষিদ্ধ নগরী।
স্বপ্নে যাত্রা শুরু
করি, বৃষ্টিতে সে
যাত্রা হয় শেষ
মেঘেরা সান্ত্বনা দেয়,
আহা তত ভেজোনি বিশেষ।
একে কি সাহস বলে? আড়ালে
অবাধ্য চোখ মুছি।
ছোট গল্প উপন্যাস... ঢেকে
দেয় বিষাদের কুচি।
অনিবার্য বিস্মৃতিরা
ঢেকে দেয় বিষাদের
কুচি।
অলংকরণঃ অরিন্দম
গঙ্গোপাধ্যায়
ফেসবুক মন্তব্য