গুরু নানক সম্পর্কে
বহুকাল ধরে আমার মনে
কিছু ব্যক্তিগত আগ্রহ
ছিল। তার মূল কারণ তাঁর
নামে প্রচলিত কিছু
গল্প। গুরু নানককে নিয়ে
যে গল্পগুলো আমি
শুনেছিলাম, তাতে একাধিক
সরোবর বা জলাশয়ের কথা
থাকে। পাঞ্জা সাহিব
সম্পর্কে গল্পটি ছিল
কীভাবে নিজের সদাসঙ্গী
মরদানার কঠিন তৃষ্ণা
মেটাবার জন্য নানক একটি
পাহাড়ের গায়ে হাত রাখেন
আর সেই হাতের ছাপ ধরে
সেখানে এক বিশাল সরোবর
টলটল করে ওঠে। আবার
সুদূর সিকিমে
গুরুদংমার হ্রদের পাশে
বাস করেন যে শিখসমাজ,
তাঁদের কাহিনীটি হল,
যখন গুরু সেখানে
গিয়েছিলেন তখন সেই
মানুষদের জলের কষ্ট,
চারিদিকের বরফ ভেঙে
অনেক নিচ থেকে জল আনতে
হওয়া, দেখে এই হ্রদ
সৃষ্টি করেন, কঠিন
বরফের মধ্যেও যার
পুরোটা কখনো জমে যায়
না। এরকম নানা জায়গায়
বিভিন্ন গল্প। করুণার
আর জলদানের।
স্বর্ণমন্দির,
গাড়োয়ালের হেমকুন্ড
সাহেব বা দিল্লির বাংলা
সাহেব সহ প্রত্যেক শিখ
গুরদোয়ারার কাছে
দেখেছি অতি অবশ্যই একটি
বড় পরিষ্কার জলাশয়
থাকে। জানিনা এটা
তাঁদের ধর্মের কোনো
নিয়ম কি না, কিন্তু
ব্যাপারটা, বলাই
বাহুল্য, আমাকে খুব
মুগ্ধ করে। অনেকদিন ধরে
ইচ্ছে হত যদি এই
মানুষটির কোনো জীবনী
পাই যাতে ধর্মগুরুর
মহিমার বদলে মানুষ
নানকের পরিচয় থাকবে!
কিন্তু সে কী আর হয়! শুরু
যেখান থেকেই হোক না কেন,
ধর্ম নিজেই এক
প্রতিষ্ঠান হয়ে
প্রত্যেকজন
বিদ্রোহীকে শেষ
পর্যন্ত গ্রাস করে নেয়।
গৌতম বুদ্ধ কিংবা
যীশুখ্রীষ্টই
পরিত্রাণ পাননি
প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার
কবল থেকে সেখানে নানক
কবীর মীরা চৈতন্যের আর
কতটুকু সাধ্য
স্বকীয়তার! ভাবতাম
ভাবনাই সার!
কী আশ্চর্য, পেয়ে
গেলাম!
যতোখানি আমার চাওয়ার
স্বপ্ন ছিল, তার চেয়ে
অনেক অনেক বেশি করে।
মানুষ নানককে বুঝবার
একান্ত চেষ্টা নিয়ে,
কেবল গভীর ভালোবাসায়
পাঁচশ বছর উজানে গিয়ে
খোঁজার জন্য দুর্গম
পরিক্রমা করেছেন দুই
ইসলামী মরমিয়া মানুষ।
হারুণ খালিদ যখন লাহোর
বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র, সেই প্রতিষ্ঠানে
বক্তৃতা করতে এলেন
প্রায় একপ্রজন্মের বড়
ইকবাল কায়সার।
পাকিস্তানে অন্য
ধর্মের পবিত্রস্থান
গুলি খুঁজে বার করে
সেগুলো পুনরুদ্ধারের
চেষ্টা করা ছিল তাঁর
ভালোবাসা ও আগ্রহের
কাজ। দুজনের এই দেখা
হওয়াটাও যেন কোন
আশ্চর্য সংঘটনা।
ইকবালের কাছ থেকে তরুণ
হারুণ শুনতে লাগলেন
তাঁর যাত্রার কথা।
পেশায় স্কুলের শিক্ষক,
স্কুলের ফাইনাল
পরীক্ষাও না দেওয়া
ইকবাল কায়সার
কেবলমাত্র ভালোবাসার
টানে পাকিস্তানের
পূর্ব-পশ্চিম জুড়ে এই
খোঁজ চালিয়ে
যাচ্ছিলেন। কোনো অর্থ
বা যশোলাভের আশা নয়,
কেবল ব্যক্তিগত
আগ্রহেই
পূর্বপাঞ্জাবের প্রখর
গ্রীষ্মে গরমের ছুটিকে
কাজে লাগিয়ে সাধারণ
বাসে ট্রেনে ঘুরেই কাজ
করছিলেন তিনি। এবং
হারুনের সঙ্গে দেখা
হবার আগেই পৌঁছেছিলেন
পাকিস্তানের ওই অংশে
ছড়িয়ে থাকা প্রায় চারশ
গুরুদোয়ারায়। সেগুলোর
অধিকাংশই রাজনৈতিক
ধর্মান্ধতার উৎসাহে
ততদিনে মহিমা হারিয়ে
পরিণত হয়েছিল মসজিদ
কিংবা সরকারি ভবনে।
অথবা ভেঙেচুরে অনাদৃত
পড়েছিল দেশভাগের
ক্ষতচিহ্ন হিসাবে। সেই
বেদনা আর অপ্রেমের
স্তূপ সরিয়ে
জনইতিহাসকে খুঁজবার
নেশায় ইকবাল কায়সারের
সঙ্গে যোগ দিলেন তরুন
হারুণ খালিদ।
গুরুদোয়ারাগুলোর
অনেকগুলোই যেহেতু
প্রতিষ্ঠিত নানকের
জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বা
সেই বিশেষ জায়গায় তাঁর
পদার্পণ-এরকম কোন না-
কোন উপলক্ষ্যস্থানে,
ফলে তারা যেন হারানো
সময়ের মধ্যে কোথাও
কোথাও এক একটি
ইঁটচুণসুরকির
পেজমার্ক।
এই ঘটনাচিহ্ন গুলোর
মধ্য দিয়ে একজন
জিজ্ঞাসু তরুণ
দার্শনিককে খুঁজছিলেন
পাঁচশত বছর পরের দুই
পরিব্রাজক। বইটির নামও
ততোখানিই মনোমুগ্ধকর-
Walking With Nanak. নানকের সঙ্গে
হাঁটা। অপূর্বভঙ্গীতে
বিবৃত হয়েছে সেই চলতে
থাকার গল্প। চলা যখন
একই সঙ্গে হয়ে উঠছে
খোঁজ আর তীর্থ। পথ আর
গৃহ। নানক উদ্ঘাটিত
হচ্ছেন তার সঙ্গে সঙ্গে
আমরা প্রত্যক্ষ দেখছি
দুই সহযাত্রীরও ‘হয়ে
ওঠা’। যেখানে
মামাবাড়িতে
জন্মেছিলেন নানক, সেই
রায় ভোই দি তলবিন্দী
গ্রাম, পরে যার নাম হয়
নানকানা সাহেব, সেখান
থেকে চূড়কোট বাজার।
এখান থেকে কিশোর নানককে
কিছু সওদা করে এনে
নিজের সামান্য হলেও
ব্যবসা উপার্জনের
চেষ্টায় লেগে পড়তে বলেন
তার বাবা আর নানক
জঙ্গলের পথে কয়েকজন
অনাহারে মৃতপ্রায়
যোগীকে দেখে তাদের
খাবার কিনে দিয়ে সে
টাকা খরচ করে ফেলেন।
একটি জ্ঞানপিপাসু
কিশোরের পক্ষে হয়ত এ
কাজ এমন অস্বাভাবিক
কিছু নয়, কিন্তু
তৎকালীন সমাজে এমনকি
নিজের পরিবারেও
‘অপদার্থ’ বলে ধরে
নেওয়া হয় নানককে। পরে
নানকের ভক্তদের কাছে
কিন্তু এই ঘটনা অনেক বড়
গুরুত্ব পায় নানকের
ভবিষ্যত জীবনের এক অমোঘ
দিকদর্শক চিহ্ন
হিসাবে। এই ঘটনাকে
ভক্তরা নাম দেন ‘সাচ্চা
সওদা’। এই প্রতিটি
ঘটনাকে স্মরণীয় করার
জন্য উত্তরকালে
নানকভক্তরা প্রত্যেক
জায়গায় প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন গুরদোয়ারা।
সঙ্গে পবিত্র
পুষ্করিণী। হারুণরা
দেখছেন গ্রামের মধ্যে,
দূরে কোথাও পথের পাশে,
যেখানে একাধিক
গুরদোয়ারা পরিবর্তিত
হয়েছে মসজিদ বা মুসলিম
কোনো পবিত্রস্থলে,
সেখানে এইসব পবিত্র
পুষ্করিণী সমস্ত
গুরুত্ব হারিয়ে হয়ে
গেছে অপরিষ্কার পচা
পুকুর বা ডোবা।
এই পরিভ্রমণকালে
জায়গাগুলোর ইতিবৃত্ত
সংগ্রহের জন্য তাঁরা
লিখিত ইতিহাস বা
ভক্তদের লেখা
জীবনবৃত্তান্ত(জীবনসা
ী) পড়েছেন ঠিকই কিন্তু
অনেকটা নির্ভর করেছেন
লোকশ্রুতির ওপর।
প্রণিধানযোগ্য একটি
কথা বলছেন হারুণ,
‘দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা
বরাবর ইতিহাস গচ্ছিত
রেখেছি আমাদের লোকগল্প,
জনশ্রুতি, অতিকথা,
স্থাননাম ইত্যাদির
মধ্যে। বহুবার দেখা
গিয়েছে পেশাদার
প্রত্নতাত্ত্বিকরা
এসে আবিষ্কার করার অনেক
আগে থেকে বিভিন্ন
ধ্বংসস্তূপ নিয়ে
স্থানীয় গল্প প্রচলিত
আছে।’ এ কথার সত্যতা
আমাদের নিজেদের দেশের
ইতিহাসে বহুবার
প্রমাণিত। এই পদ্ধতিটি
নেবার ফলে ইতিবৃত্ত পথে
দুই পরিব্রাজকের
যাত্রার একটি বহুকৌণিক
বিবরণ পাঠকের অতিরিক্ত
লাভ। তাঁদের বিবৃতির
মধ্যে আছে বিভিন্ন
লোকের মুখে বলা গল্প,
নিতান্ত হাটুরে লোকের
জনশ্রুতি, একদা
গুরদোয়ারা এখন
আর্মি-বাঙ্কার হয়ে
যাওয়া বিল্ডিং্যের
সান্ত্রীর বিবরণ...
কিসের খোঁজ ছিল
নানকের? কী তাঁকে
বিশিষ্ট করেছিল সেই
পাঁচশত বছর আগে? নানক
কিন্তু কোনো ধর্মমতের
প্রতিষ্ঠাতা নন। বরং
উলটো। হিন্দু আর
মুসলমান – উভয় ধর্মমতের
থেকেই বেরিয়ে এসে তিনি
চাইছিলেন মানবতাবাদী
এক মুক্ত
আধ্যাত্মিকতা। তাঁর
জীবনের বিভিন্নঘটনা
সেই কথারই পরিচয় দেয়।
উঁচু জাতের হিন্দু
পরিবারে জন্মানো দরুণ
পৈতের আয়োজন হয় তাঁর।
সেই ধর্মান্ধ সমাজে
দাঁড়িয়ে সেই সদ্যকিশোর
বলেন, ‘একগাছি সুতো কী
করে পবিত্র হতে পারে? এ
তো ময়লা হবে, ছিঁড়ে যাবে
একদিন। কেবল সত্যকে
খোঁজা ছাড়া আর কিছুই
ধর্ম নয়।’ কোন
ধর্মপ্রচার নয়, নিজের
উপলব্ধি মূলত কবিতায়
প্রকাশ করছেন নানক। সব
কবিতাই গীত হত তখন। সরল
পাঞ্জাবি ভাষায় রচিত
সেইসব কবিতায় বলছেন
আচারবিচারের
অর্থহীনতার কথা,
কাজি বলে মিথ্যা কথা,
খায় অখাদ্য
প্রাণীহত্যা করে বামুন
গঙ্গাতে দেয় ডুব
অন্ধ যোগী জানে না কোনো
পথের হদিস
তিনে মিলে ধ্বংস করছে
মানব জাতকে।
যখনই তাঁকে চ্যালেঞ্জ
করছে কেউ তুমি হিন্দু
নাকি মুসলমান? একই
উত্তর দিচ্ছেন নানক, না
হিন্দু, না মুসলমান।
বলছেন ‘এক ঈশ্বর’এর
কথা। বারে বারে বলছেন
আচারবিচার,
জাত-ধর্মভেদের অসারতার
কথা।
‘কোনো কাজের নয়’
অভিধা মাথায় করে ঘর
ছেড়ে দিদির শ্বশুরবাড়ি
সুলতানপুরে চলে যান
নানক। দিদির
শ্বশুরবাড়িতে থাকা
তখনকার সমাজে ছিল ‘যেন
কুত্তার জীবন’। দুই
রাহী মর্মে মর্মে অনুভব
করছেন নানকের সে দিনের
মনোকষ্টকে। তবু দিদি
নানকিই তাঁর
স্নেহাশ্রয় সংসারে।
সেখানে সকালে রোজকার মত
নদীতে স্নান করতে গিয়ে
নানক ফেরেন না একবার।
তিনদিন পর ফেরেন, তাঁর
জনমসাখীগুলি বলে সেই
সময়েই সিদ্ধজ্ঞান লাভ
করেন নানক। ‘না হিন্দু,
না মুসলমান’। তখন তাঁর
বয়স সতের।
ভক্তেরা অনেকে মনে
করতেন দিদির কাছের এই
সুলতানপুর থেকেই
নানকের মনে নিজস্ব এক
আধ্যাত্মিকতার বোধ
জন্ম নেয়। এই সময় থেকে
পরের সুদীর্ঘকালের
জন্য তাঁর সাথী হয়ে যান
এক মুসলমান তরুণ –
মরদানা। মরদানা যেন একই
সঙ্গে জাতপাতে বিভক্ত
সমাজের প্রতি নানকের এক
স্থির বিদ্রোহ আবার এই
মরদানাই তাঁর
প্রতিফলিত অস্তিত্ব।
সমস্ত বোধ, অনুভূতি আর
জ্ঞান নানক প্রথম
প্রকাশ করছেন এই
সঙ্গতে। নিজের হাতে
গাছের ডাল কেটে
মর্দানাকে বানিয়ে
দিচ্ছেন একখানা রবাব-
সেকালের এক জনপ্রিয়
তারযন্ত্র আর নিজে
গাইছেন নিজের রচিত গান।
সন্ধ্যার পর সন্ধ্যা
কেটেছে এই একভাবে।
আধ্যাত্মিক ভাবনা
নিয়ে নিজের কথা লোকের
কাছে পৌঁছে দেবার জন্য
বিরাট ভূখন্ড ভ্রমণ করে
বেড়ালেন নানক। প্রথমে
পূর্বে, বাংলা। সেখান
থেকে দক্ষিণে সিংহল
পর্যন্ত। ফিরে মায়ের
কাছে তালওিন্দী
গ্রামে। সেখান থেকে
উত্তরে কাশ্মীর, নেপাল,
তিব্বত। ফিরে পশ্চিমে
মক্কা, তারপর শেষ
পর্যন্ত পাঞ্জাবের
কর্তারপুরে তাঁর
অবস্থিতি। এই
পরিক্রমায় তাঁর
কেটেছিল জীবনের চব্বিশ
বছর। প্রায় সমস্তটাই
নানক যাত্রা করেছিলেন
পায়ে হেঁটে। করতারপুরে
এসে সাধারণ কৃষকের
পরিশ্রমী সংসারী জীবন
কাটাতে লাগলেন নানক।
জীবনযাপনের যেই আদর্শ
প্রচার করেছিলেন সারা
জীবন, সেই ঈশ্বরের নাম
গাওয়া, সৎ পরিশ্রম করা
আর ভাগ করে খাওয়া, তাই
পালন করতে লাগলেন। সেই
জীবনের প্রভাব যে কতো
গভীর ছিল তার একটি খুব
গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন
আজও রয়ে গেছে- সে হল তাঁর
প্রবর্তিত ‘লঙ্গর’
অর্থাৎ জাতধর্মবর্ণ
নির্বিশেষে সমস্ত লোক
একত্র বসে খাওয়া আর
নিজেদের ও পরস্পরের
বাসন ধুয়ে নেওয়া।
কিছু আগে-পরে ওই একই
সময়ে আমরা অবাক হয়ে
দেখি ভারতের বিভিন্ন
প্রান্তে সংকীর্ণ
সামাজিক অনুশাসন আর
ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করা একদল মেয়ে
পুরুষকে, যাঁরা সকলেই
নিজের নিজের মত করে
বললেন এই কথা যে
প্রতিষ্ঠানের চেয়ে
অনেক বড় ভালোবাসা।
একমাত্র ভালোবাসাই
মানুষকে সত্যে পৌঁছে
দিতে পারে। এবং এই নানক
কবীর চৈতন্য মীরাবাঈরা
নিজেদের ঠাঁই ছেড়ে ঘুরে
বেড়িয়েছেন এ দেশের
অনেকখানি জায়গা জুড়ে।
সাধারণ মানুষদের সঙ্গে
কথা বলেছেন তাঁরা, সহজ
ভাষায় জানিয়েছেন
তাঁদের সত্য উপলব্ধি।
আর এই পাঁচ-ছয়-সাতশ বছর
ধরে জনস্মৃতি নানা
কাহিনীর রূপে, অতিকথার
আবরণে সেই সত্যপথিকদের
ব্যাকুলতার কথা বুকে
ধরে রেখেছে। তাদের
তৃষিত ব্যাকুলতার গান
গুলি শত শত বছরের অজস্র
ভুলে যাওয়া প্রকান্ড
ঘটনাস্রোতের ওপর দিয়ে
ভেসে রয়েছে। স্থায়ী
হয়েছে জনমানসের
অক্ষয়পটে। কবিতার
সত্যশক্তিতে।
নানক নিজের করা
সংকলনে সযত্নে ঠাঁই
দিয়েছিলেন তাঁরও প্রায়
দুশো বছর আগেকার সাধক,
পাঞ্জাবি ভাষার প্রথম
কবি বাবা ফরীদের গানকে।
কবীর বাণীকে। নানকের
পরবর্তী গুরু অঙ্গদ,
যাঁর পূর্বের নাম ছিল
লেহনা, অন্যের মুখে
নানকের গান শুনে এসে
যিনি নানকের সঙ্গে দেখা
করেন আর দীর্ঘ দীর্ঘ
তর্কের পর মেনে নেন
নানকের ‘নিরঞ্জন’ মত,
চাইলেন নানকের সমস্ত
গান লিখে রাখতে। তখন
পর্যন্ত পাঞ্জাবি ছিল
সাধারণ হাটুরে
অশিক্ষিত লোকেদের
ভাষা। গুরু অঙ্গদদেব সে
ভাষার লিপি তৈরি
করলেন-গুরুমুখী।
দিন বদলেছে তারপর।
সেই বদল দেখে
সত্যপথিকের মত আরো দুই
পরিব্রাজক বেদনা বোধ
করছেন পাঁচশত বছর পরে।
হারুণ বলছেন ইকবালকে,
-আপনার কি মনে হয় না,
এরকম ভাবে নানককে
খুঁজতে খুঁজতে আপনার
ভেতরেও ঢুকে পড়ছেন
কিছুটা নানক? ইকবাল
মেনে নিচ্ছেন, হারুণও।
পাঁচশত বছর আগেকার মতই
কিছু একা হয়ে যাচ্ছেন
তাঁরাও সমাজে, স্বজনে।
নিজেদের মুদ্রাদোষে।
কেন এত অন্যরকম তুমি? এই
প্রশ্নের সামনে কিছু
যেন অসহায় নিরুত্তরে।
ক্রমশ ্মিশে যাচ্ছেন
বিষয় আর বিষয়ী। যে কোনো
প্রকৃত কবির মত বিপন্ন
হয়ে পড়ছেন, ক্রমশ। আর
হাঁটছেন, হাঁটছেন...
নানকের সাথে। কবিতার
সাথে। সত্যেরও সাথে।
অলংকরণঃ অরিন্দম
গঙ্গোপাধ্যায়
ফেসবুক মন্তব্য