একে তো আমূলের সাদা
টিনের কৌটো। তার ওপর
অনেকদিনের পুরোনো
ছোট্ট ভাল্লুকের
গোলাপী ছবিটা। মনে
হচ্ছিল না আমি কোন
স্মার্ট ফোনের যুগে
আছি। লোকটা বাঁশের ডগা
থেকে লেচি কেটে লজেন্স
বানাচ্ছিল। আমি বললাম,
"ক্যায়সে দিয়া?"
ও বলল,"দশকা পাঁচ"।
ঠিক সেইসময় মুম্বাই
ফৈজাবাদ পাঁচ নম্বরে
ঢুকছে। গুনে গুনে
বারোটা স্লিপারের পরে
বি ফাইভ পাশে এসে
দাঁড়াল। আমি ডাউন
কারজাতের
বম্বার্ডিয়ারে
কল্যাণের দিক থেকে ছয়
নম্বরে জানলার পাশের
সিট। সময় দশটা দশ।
উপনগরীয় হিসেবে রাতটা
সন্ধ্যের দিকে। বাইরে
ডিনারের ব্যবস্থা ছিল।
তাই আজ আর বাড়ি জাগাতে
হবে না। ভাবলাম
লোকটাকে ডাকি। রাতে
খাওয়া দাওয়ার পর থোড়া
মিঠা... চলতা হ্যায়।
নাহ্, পরিকল্পনা
পরিত্যাগ করলাম।
ডায়বেটিসের রুগির
পক্ষে ব্যাপারটা
অ্যাডভেঞ্চার হয়ে
যাবে।
তবু লোকটাকে ডাকলাম।
হিন্দীভাষী
ফেরিওয়ালা। এ শহর এদের
জন্য নিদারুণ।
'কাঁহা রহতে হো?'
দশটা বেজে গেছে। তাই
বোধহয় ওরও ফুরসত ছিল।
বলল, 'উলহাসনগর।'
আমি হেসে বললাম, ' ঔর
কাঁহা সে?'
'দাদা ম্যায়তো জৌনপুর
সে।' অভিব্যক্তিহীন
মুখ।
লেচি টেনে লজেন্স
বানাতে ব্যস্ত।
কল্যাণ স্টেশনেও যারা
নিত্য নামে না, তারা সব
কারজাত,বাদলাপুর কিংবা
টিটওয়ালার যাত্রী।
বিশেষত অহিন্দীভাষীর
সংখ্যা এখন বেশি ।
সেরকম কিছু যাত্রী মুখ
তুলে তাকাল।
লোকটা লেচি টানতে
টানতেই বলল,' দাদা হাম
তো আভি মুসাফির।
উপরওয়ালা হিন্দীভাষী
বানাকেই ছোড়া। সারে
দুনিয়াকা নফরৎ। লেকিন
জিনে কা বাজী লাগানা
পড়া। আসল মে হাম তো
কাঁহিকা ভি নেহি।'
লোকগুলো চুপ চুপ দেখে
মাথা নিচু রাখছিল।
পায়ের নিচের জমিটা না
থাকলেও হারা যুদ্ধটা
জিততে হয়। ভূমিপুত্র
বোঝে না ভূমিহারার
অব্যক্ত যন্ত্রণা।
অবশ্য বোঝবার দরকারও
নেই। ওটা তো উপরওয়ালারই
দেওয়া ডিউসের পর
অ্যাডভান্টেজ।
দু মিনিট কথা বলিয়েছি।
তারই দাম হিসেবে বললাম,
'দে দো দশকা পাঁচ।'
ততক্ষণে উলহাসনগর এসে
গিয়েছে। লোকটা হাত তুলে
বলল, 'আজ কে লিয়ে ইতনা হি
কাফি। কাল মিলেঙ্গে। তব
তক কে লিয়ে আজ্ঞা
দিজিয়ে। আল্লা হাফিজ।
জয় শ্রীরাম।'
লোকটা আমাকে লজেন্স না
দিয়েই নেমে গেল।
অলংকরণঃ কল্লোল রায়
ফেসবুক মন্তব্য