মধ্য-যৌবনের
বারান্দায় বসে
দার্শনিক সুলভ ডায়লগ...
এ জীবন তো জীবন নয় যেন
গাছের ফাঁক দিয়ে নাক
গলানো একশো এম এল
রোদ্দুর কিংবা কুয়াশার
মলাট মোড়া রাতে চাইনিজ
কম্বলের ওম... কল্পনার
টিনের চালে হিমেল
টুপটাপ আর আমলকির চিরল
চিরল পাতার খাঁজে
লুকিয়ে থাকা দিস্তা
দিস্তা প্রজাপতি... মন
কেমনের ধনেপাতা গন্ধ...
মন ভালোর
ক্যালাইডোস্কোপ...
তবে স্মৃতির ঝোলাতে
শৈশবের সিরিয়াল মানেই
যে এমন গোল্লাছুট ইকির
মিকির চাম চিকিরের
এপিসোড তা কিন্তু নয়...
চাহে তুম্ মানো ইয়া না
মানো ইয়ার... ওখানে ডাঙা
থেকে কুমিরের জলে নামার
থ্রিল, পুতুল খেলার
সামিয়ানায় বর-বউ সাজার
আশ্লেষ পর্বও থাকে।
আমেজে মজে গিয়ে পুরানো
খেরোর খাতার পাতা
উল্টাতেই দেখি ছিপি
খোলা নরম পানীয়ের
বোতলের মতো ভিতর থেকে
ভুস্ করে ভেসে উঠলো
নস্ট্যালজিক ফেনা...
সেখানে জিভ জুড়িয়ে
দেওয়া ঠান্ডা আশ্বাসের
সঙ্গেই লেপ্টে আছে
ঝাঁঝালো স্বাদ...
আচ্ছা সেই হাঁটু-বেলা
দিনে (যদিও আমার হাঁটু
দুটো আমার সঙ্গেই
জন্মেছিল বলে আমার
বিশ্বাস) কী কী
ভালোবাসতাম আমি? আরে
এতো তো একদম কমন
প্রশ্ন, সিলেবাসের
মধ্যেই আছে, তবে হ্যাঁ
ফর্দাটা পুরুত-মশাই এর
দেওয়া দশকর্মা
ভান্ডারের লিস্টির
চেয়েও খানিক লম্বা।
যেমন ধরুন গিয়ে... মা
বাবা ভাই বোন স্বজন
বন্ধু, বাগানে অযত্নে
ফোটা অপরাজিতা টগর
অতসী, মনোযোগী সব্জির
খেত যেখানে অহংকারে
মটমট করছে লাল লংকা,
টমেটো আহ্লাদি চিকন
সবুজ পালং এর ঝাড়,
গোলাপি ভোরের নরম আলো,
দুপুরের যুবক রোদ, একলা
হয়ে যাওয়া কমলা বিকাল,
মিঠে প্রদীপের
সন্ধ্যা, ঠাকুমা-গল্পে
জারানো শিমুল তুলার
বালিশ, ব্যঙ্গমা
ব্যঙ্গমী পক্ষীরাজ
ঘোড়া ব্লাঁ ব্লাঁ
ব্লাঁ... জানি এই সব
ধানাই পানাই করলে দিব্য
একখান আঁতেল মার্কা
লেবেল সেঁটে দেওয়া যায়
আমার দেওয়ালে...
যত রাজ্যের ভাট্ কথা।
হ্যাঁ রে শৈশবে তোর কোন
এ-গ্রেড ফষ্টিনষ্টির
সাতকাহন ছিল না? ছিল না
কোনো জান-বুঝ দেখনদারির
অহেতুক খুকিপনা? এসব
আমাকে নয়, আয়নার সামনে
দাঁড়ালে যাকে দেখা যায়
আমার বকলমে তাকেই
শুধালাম...
কাট্ কাট্... ফ্ল্যাশ
ব্যাকে ঝলসে ওঠে
নিষিদ্ধ বুদ্বুদ...
ডাউন দি মেমরি লেন ধরে
ধরে বাই লেনে পা পড়তেই
পুড়ে গেল পায়ের পাতাটা।
আমি আয়নায় তাকাতে ভয়
পেলাম আমার হিংসা আমার
ঈর্ষার কুচুটেপনা সব
যেন সাপের জিভের মতো
হিস হিস করছে... ভেসে
উঠছে মুখেদের মিছিল।
দেবী প্রেম করছে, আমার
সাথে এক ক্লাস হলে কী
হবে বেশ ডাঁশা
স্ট্যাটিস্টিকস্...
নীতার কথা না বলাই ভাল
ওর পিছনে যত ছেলের লাইন
সেটা গোনার চেয়ে তেরো
ঘরের নামতা শেখা ভালো।
প্রেম ব্যাপারটা
পক্সের চেয়েও ছোঁয়াচে
স্বভাবতই চারপেশে এমন
আগুনে ফাগুন দেখে আমার
ইচ্ছেগুলোও সুড়সুড়ি
দিত। শুধু আমারই কেন
এমন এই মেঘলা দিনে একলা
দশা!
অথচ ভীষণই প্রেম পেত
আমার... মনে হতো বুকের
মধ্যিখানে লবেজান হৃদয়
নয় গভীর খাতওয়ালা আস্ত
একখান ডেকচি রাখা আছে...
সেই ডেকচিতে প্রেম রস
এক্কেবারে
গুবগুবাচ্ছে অথচ গড়িয়ে
পড়ার পাত্র পাচ্ছে না...
আমার নাকটা ঈষৎ ভোঁতা,
চৌকো চিবুক এবং ফিগারটা
ছোটখাটো হলেও দুধে
আলতা স্কিন কালার, এক ঢল
রেশমী জুলফে. ব্ল্যাক
স্মাজি চোখ উপরন্তু আমি
বরাবরের মেধাবি আর
দামাল টাইপের মেয়ে... অথচ
সবাই নির্দ্বিধায় আমার
সামনেই নিতান্তই
মধ্য-মেধার শান্তশিষ্ট
কালোকুলো দিদিটাকে
বলতো মীনার রঙটা ময়লা
হলে কী হবে ওর মুখশ্রীর
ধারে কাছেও পান্না যায়
না। আমার ডেকচি চুঁইয়ে
পড়তো ঈর্ষা আর তখন
থেকেই মনে মনে দিদিকে
আমার একমাত্র
প্রতিদ্বন্দী ভাবনার
শুরুয়াৎ...
দিদির কমপ্লান নন্দিত
বাড়বাড়ন্তের আড়ালে
আমি যেন কোনো ছেলের
চোখেই পড়তাম না। দিন
গড়ায় আমার ডেকচি ভরে
ওঠে হিংসায়... বদলার
নেওয়ার সাইরেন বাজে
বুকের ভিতরে... আড় চোখে
দেখতাম কিশোরদা
সাইকেলের ক্রিং ক্রিং
ঘন্টা বাজিয়ে জানালার
নীচে দাঁড়ালেই দিদি
উদগ্রীব আর ঠিক তখনই
আমার, হয় ব্যাপক পেট
ব্যথা বা মাথা ব্যথা
স্টার্ট হতো... ব্যাস
দিদির প্রেমজ বিকালের
দফা রফা... দিদি এবং
কিশোরদা দুজনেই বুঝে
যাচ্ছিল এভাবে চললে
তাদের জানালা-বাজি আর
দানা বাঁধবে না তাই
একদিন কিশোরদা সটান
বাড়িতেই চলে এল (তবে যত
দূর সম্ভব এর পিছনে
দিদি-ঘটিত কলকাঠি নাড়ার
একটা ব্যাপর ছিল)।
তারপর আমাকে বোন বোন
বলে ডেকেহেঁকে
কিশোরদার সেকি
আদিখ্যাতা যেন আমার
মতো বুনুর জন্যই তার
দিল্ এক্কেবারে
দরিয়াবৎ! বড়রা না
বুঝলেও আমি ঠিক জানি,
আমাকে বোনের শিখন্ডী
বানিয়ে সিনেমা হলের
আবছা আঁধারে দিদির
সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি
খেলাই মজনুর আসল
চাঁদমারি সঙ্গে সঙ্গে
মনের চামড়ায় কাশ্মিরী
তিখা লালের জ্বলুনি...
কিন্তু
সফিস্টিকেশানের খোলোস
ছেড়ে বলে উঠতে পারছি না
আমার মোটেই বোন সাজার
সাধ নেই বরং প্রেমিকা
হবার জন্য রাগী বিড়ালির
মতো ওঁৎ পেতে আছি...
মোদ্দা কথা ঐ কালো
মুটকির কাছ থেকে তার
রাজপুত্রটিকে কেড়ে না
নেওয়া অব্দি শান্তি
পাচ্ছি না...
ঘটে আমার বুদ্ধি ভালই
ছিল... যেন ওদের
প্ল্যানিং কিছুই
বুঝিনি ভাণ করে - চোখ
নাকে জল এনে দিলাম
মায়ের কাছে দিদির নামে
মিথ্যে নালিশ ঠুকে...আর
যায় কোথা! লায়লা- মজনুর
সিনেম যাওয়ার চাল
পুরোটাই বাঞ্চাল...
আমাকে ভোলাতে কিশোরদা
তখন ব্যাডমিন্টন খেলার
প্রস্তাব দিল... আমার
খিল্লি তখন কে দেখে! আমি
তো এটাই চাইছিলাম।
কিশোরদাকে যে আজ, হ্যাঁ
আজই আমার চাই... আমি
কিছুতেই দিদির কাছে
হারবো না।
দিদি হয়তো ভেবেছে সেও
কোর্টের সাইডে দাঁড়িয়ে
খেলা দেখবে আর
ছুতো-নাতায় কিশোরদার
কাছাকাছি থাকবে,
সিনেমার অন্ধকার না
হ’লেও এটা অন্তত
মন্দের ভাল। অথচ আমি যে
কী পাব্লিক সে তো আমিই
জানি, খেলার কথা শুনেই
ঘটি হাতা ফ্রক ছেড়ে পড়ে
নিয়েছি মিনি স্কার্ট আর
টপ। জানি যতবারই ফেদার
পেটানোর জন্য হাত তুলবো
ততবারই উর্দ্ধমুখি হবে
আমার আ-নাভি টপ... সেখানে
বিছানো আছে শ্বেত
মাখনের মোরাম... আমি
ইচ্ছে করে ভুলভাল শট
খেলছি বারবার নীচু হয়ে
ফেদার কুড়াচ্ছি তাতেও
কিশোরদা পটছে না দেখে
একেবারে ডাইভ দিয়
মাটিতে আছড়ে পড়লাম...
হাঁটু ছড়েছে তো বয়েই
গেছে ভারী, কিশোরদার
হাত যে আমার হাঁটুতে...
আমার মগজের গ্রে
–ম্যাটারে তখন
ফোরফর্টি ভোল্টের
শয়তানি স্পার্ক ...
গড়িয়ে দিচ্ছি ছেনালির
ধারা... ব্যথাতে যেন আর
উঠে দঁড়াতেই পারছ না
এমন নেকু নেকু ঢলানিতে
এলিয়ে পড়ছি কিশোরদার
বুকের কাঁচা নরম কচি
আমপাতার মতো গন্ধ ভরা
ঘাসে... ওদিকে ভেবলি
দিদিটা ভয় পেয়ে ডাক্তার
ডাকতে বেরিয়ে গেছে আর
এদিকে হতভম্ব সবার
চোখের সামনে দিয়ে
কিশোরদা আমাকে
কোলপাঁজা করে নিয়ে
যাচ্ছে ঘরে... বিছানায়
শুইয়ে দিয়েছে আমাকে...
ততক্ষণে কিশোরদাও পড়ে
ফেলেছে আমার তির্যক
ইশারা... আমার কপালে রাখা
কিশোরদার হাত ক্রমশ
নিম্নমুখী হচ্ছে... আমি
ধোঁয়া ওঠা গরম থালা
বেড়ে দিচ্ছি বলিষ্ঠ
পিঁড়ির সামনে... দাদার
মাইল-ফলক লাগানো বালির
বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে নামছে
ফুটন্ত লাভা... আহা একেই
বলে বুঝি প্রতিশোধ...
না না ধুসসস্
প্রেম-ট্রেম কিচ্ছু নয়
আমার ডেকচিতে তখন
ছিনিয়ে নেওয়ার আনন্দ
বুরবুরি কাটছে...
বাকিটা ইতিহাস...
ফেসবুক মন্তব্য