জন্মসূত্রে দুটো রঙিন
প্রজাপতির মতো ছটপটে
উজ্জ্বল ডানা
পেয়েছিলাম। সে ডানা
পিঠে বেঁধে চলত আমার
সফর সকাল থেকে
সন্ধে।মায়ের চোখ আড়াল
হলেই ডানার ফরফরানি
বাড়তো কখনো চেনা অচেনা
বুনো ঝোপ ঝাড়ের
গন্ধে,সন্ধ্যামনি
ফুলের মিষ্টি রঙ দেখে
আবার কখনো ছাইয়ের স্তুপ
পেড়িয়ে আম জামের পাতার
শান্ত ছায়া কুড়োতে,
আবার দুপুরের মিঠে রোদ
মেখে সবুজ নরম ঘাসের
মাথায় চুপটি করে বসে
থাকা গঙ্গাফড়িং দেখেও
আমার আস্ফালন সীমা
ছাড়াতো। গঙ্গায় কত জল
আছে প্রশ্ন করলে সে
আবার নাকি মাথা দুলিয়ে
উত্তর দেয়, এমনটাই তখন
শিখিয়েছিল দিদিসোনা, আর
সেই শিক্ষায় একনিষ্ট
ছাত্রী আমি কি জ্বালাতন
করতাম সেই নিরীহ
জীবটিকে। সেই সময়ের
আমার সবচেয়ে প্রিয়
উল্লাসের জায়গা ছিলো
মস্ত ঝাঁকড়া মাথাওয়ালা
আদরিনী থোকা জবার গাছ,
প্রতিদিন অজস্র ফুল
ফুটে গাছটিকে পূজার
উপাচারে ভরিয়ে দিত আর
আমার ছোট জিজ্ঞাসু হাত
লাল হলুগ পরাগ রঙে উপচে
পড়তো। এই প্রজাপতি মনের
আবার বেশ কিছু সময়
কাটতো সাজানো
রান্নাবাটি ও পুতুুলের
সংসারে যেখানে আনাজের
খোসার তরকারি ও গোল
যত্ন করে কাটা সবুজ
পাতার লুুচিতে পাত
ভরতো। আর মায়ের ফেলে
দেওয়া ব্যাগ ,ভেঙে
যাওয়া চশমার ফ্রেমে
ডোরাকাটা গামছায় বাঁধা
বিনোদ বেণীতে সেজে উঠতো
আয়না দিদিমণি, কি
গম্ভীর আর রাশভারি ছিল
সেদিনগুলোর
শিক্ষাবিদ।
রঙিন সেই ইচ্ছে ডানার
উড়ান চলেছিল আরো কিছু
সময় ধরে কিন্তু ধীরে
ধীরে তা রূপ নিয়েছে
নিশ্চুপে, মনে মনে বা
চোখের প্রাপ্তিতে।
যত দিন গেছে তত সে ডানা
বড়ই আঁটোসাঁটো লাগে,তাই
গুটিয়ে রাখা আছে
কাছিমের শক্ত
খোলে।বাইরের
শব্দ,উচ্ছ্বাস,আঘাত
ভিতর ঘরে না এসেই ফিরে
যায়। এই বন্দি শিবিরে
এখন শুধু নিজের সাথে
চলে নিজেরই খেলা।
ফেসবুক মন্তব্য