তরুণ সান্যাল আমার
সামনে, কফিহাউসের কাছে,
স্বর্গের দেবদূতের মতন
নেমে এসেছিলেন একদিন,
হাংরি আন্দোলন মামলার
সময়ে।
হাংরি আন্দোলনের
মামলার আগে তরুণ
সান্যালের সঙ্গে আমার
পরিচয় ছিল না । মামলার
সময়ে কলকাতায় আমার মাথা
গোঁজার নির্দিষ্ট ঠাঁই
ছিল না । কখনও সুবিমল
বসাকের জ্যাঠামশায়ের
স্যাকরার দোকানে, কখনও
পিসেমশায়ের
আহিরিটোলার একঘরের
বাসায়, কখনও উত্তরপাড়ার
খণ্ডহরে, কখনও হিন্দি
পত্রিকা জ্ঞানোদয়ের
মারোয়াড়ি সম্পাদক শরদ
দেওড়ার বড়বাজারের
গদিতে শুয়ে রাত কাটাতে
হতো । খাওয়া পাইস
হোটেলে । স্নানের বালাই
ছিল না । পায়খানা করতে
শেয়ালদায়
প্ল্যাটফর্মে
দাঁড়িয়ে-থাকা
দূরপাল্লার ট্রেন । তখন
অবশ্য এতো ভীড় হতো না
কোথাও, কলেজ স্ট্রিটও
সন্ধ্যায় ফাঁকা হয়ে
যেতো ।
মামলাটা যখন কেবল আমার
বিরুদ্ধে রুজু হল, এবং
বাদবাকি সবাইকে ছেড়ে
দেয়া হল, তখন বাসুদেব
দাশগুপ্ত, সুবো আচার্য,
শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ
ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী,
উৎপলকুমার বসু কেউ
আদালতমুখো হতো না ।
চার্জশিট পেয়ে জানতে
পেরেছিলুম যে সুভাষ ঘোষ
আর শৈলেশ্বর ঘোষ আমার
বিরুদ্ধে মুচলেকা লিখে
হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে
সব সম্পর্ক অস্বীকার
করে রাজসাক্ষী হতে
রাজি হয়েছে । সন্দীপন
চট্টোপাধ্যায়,
উৎপলকুমার বসু আর শক্তি
চট্টোপাধ্যায় আমার
বিরুদ্ধে পুলিশের
পক্ষের সাক্ষী ।
সুতরাং উকিলদের
পরামর্শে আমাকেও আমার
পক্ষে সাক্ষীর সন্ধান
আরম্ভ করতে হয়েছিল ।
আমি তরুণ সান্যালকে
একটি চিঠি দিয়েছিলুম,
কেননা তিনিই প্রথম
আমাকে সমর্থন
জানিয়েছিলেন, বলেছিলেন
যে ‘পরিচয়’ অফিসে আমাকে
সমর্থন করা নিয়ে তাঁর
সঙ্গে বামপন্হী
বুদ্ধিজীবিদের বেশ
তর্কাতর্কি হয়েছিল এবং
উপস্হিত সবাই তাঁকে
বারণ করেছিলেন যাতে
তিনি আমাকে সমর্থন না
করেন ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বিভিন্ন লেখায় ও
সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে
তিনিই প্রথম আমার পক্ষে
সাক্ষ্য দিতে রাজি হন।
কথাটা ভুল । তাঁকে আমার
দাদা তাঁর বাড়ি গিয়ে
বহুবার অনুরোধ করার পর
তিনি রাজি হয়েছিলেন,
তাও যখন তিনি জানতে
পারলেন যে শক্তি,
সন্দীপন, উৎপল আমার
বিরুদ্ধে সাক্ষ্য
দিয়েছেন ; তার আগে আমি
যখন আমার পক্ষে সাক্ষ্য
দেবার অনুরোধ করেছিলুম
তখন সুনীল রাজি হননি ।
তরুণ সান্যাল নিজে
এগিয়ে এসে সমর্থন
করেছিলেন, তাঁর
রাজনৈতিক দলের নিষেধ
সত্বেও । তাঁর রাজনৈতিক
দলের বক্তব্য ছিল যে
আমাদের আন্দোলনটা
মধ্যবিত্তের বুর্জোয়া
আন্দোলন । আসলে তাঁরা
কেউই হারাধন ধাড়ার
হাওড়ার বস্তিবাড়িটা
দেখেননি কখনও, আমার আর
দাদার পাটনায়
অতিদরিদ্র বিহারি
অন্ত্যজদের পাড়া
ইমলিতলায় শৈশব কাটাবার
কথা জানতেন না , সুবিমল
বসাকের বাবা দেনার দায়ে
আত্মহত্যা করার পর
কৈশোর থেকে সুবিমলকেই
সংসার চালাতে হয়েছে,
বাবার দেনা শোধ করতে
হয়েছিল, প্রদীপ সুভাষ
সুবো শৈলেশ্বর অবনী
ধরের উদ্বাস্তু জীবনের
কথা জানতেন না । অবনী ধর
ছিলেন জাহাজের খালাসি,
পরে ঠেলায় করে কয়লা
বেচতেন, ফুটপাথে
ছিটকাপড় বেচতেন,
বস্তিতে থাকতেন ।
গ্রামীণ উন্নয়নের কাজে
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে
গঞ্জে ট্যুর করার সময়ে
প্রত্যক্ষ করেছি
বামপন্হীদের
উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা,
বাহারি তিনতলা বাড়ি,
কোল্ড স্টোরেজ, স্কুল,
নার্সিং হোম ইত্যাদির
মালিক । আমার “নামগন্ধ”
উপন্যাসে আমি ভবেশ
মণ্ডল নামে সেইরকম একজন
বামপন্হী নেতার
চরিত্রে আলো ফেলেছি ।
তরুণ সান্যাল যখন
অসুস্হ ছিলেন, এই
উপন্যাসটা পড়ে আমাকে
টেলিফোনে প্রশংসা
করেছিলেন । একমাত্র
তিনিই করেছিলেন। অন্য
অগ্রজ বুদ্ধিজীবিরা তো
প্রাপ্তি সংবাদও দেননি
।
মামলার সময়, ২৭ মে ১৯৬৫
তারিখে, তরুণ সান্যাল
একটা চিঠি লেখেন আমায়।,
যা কয়েকজনের হাত ঘুরে
দাদা সমীর রায়চৌধুরীর
মাধ্যমে আমার কাছে
পৌঁছোয় । চিঠিটা তুলে
দিচ্ছি এখানে :
“প্রিয় মলয়,
আপনার বিরুদ্ধে মামলা
কি কেবলমাত্র ‘প্রচণ্ড
বৈদ্যুতিক ছুতার’
রচনাটির জন্য ? আমি
অবশ্য অন্যরকম
শুনেছিলাম । যেমন প্রেস
অ্যাক্ট ইত্যাদি ভঙ্গ
করার অভিযোগও নাকি
অন্যতম ছিল । আক্রমণ
নাকি আপনার কোনো এক
বিশেষ রচনার জন্য -- এখন
আপনার চিঠিতে সে
লেখাটির হদিস পাওয়া গেল
। অভিযোগ কি অশ্লীলতার ?
সেক্ষেত্রে বহু বাঘা
লেখক তো এখন হাতের
মুঠোয় । অশ্লীলতা তো
রচনায় থাকে, যখন কোনো
বিশেষ অর্থে যৌনবোধ
উদ্রেক করার জন্য
প্রত্যক্ষ বা ইঙ্গিত
কাজ করে । সেখানে
উদ্দেশ্য ও উপকরণের উভয়
ক্ষেত্রেই অশ্লীলতা
দেখা দিতে পারে ।
অশ্লীলতার বিষয়ে
অন্যভাবেও কথা বলা যায় --
যেমন রুচিবিরোধী
যেকোনো রিপু
উদ্রেককারী রচনা বা
শালীনতাবর্জিত । আপনার
লেখা কি বাংলাদেশে কেউ
কিনে পড়ে ? অথচ
‘নবকল্লোল’ নামে একটি
পত্রিকায়, যার বিক্রয়
সংখ্যা সম্ভবত বিপুল,
তাতে বৈশাখ ১৩৭১
সংখ্যায় জনৈক অবধূত ২৫১
পৃষ্ঠায় ‘যা নয় তাই’
নামে একটি রচনায়
লিখেছেন --- ‘তারপর সেই
হাতের সাহস গেল বেড়ে,
জামা ব্লাউজ সায়া কোনও
কিছুই আর তার কাছে
প্রতিবন্ধক নয়, লোভী
হাতটা তার (
লোপামুদ্রার, মানে
নায়িকার ) প্রতিটি
রোমকূপে আগুন জ্বালিয়ে
দিল । ( মেয়েটিও ) কোট
সোয়েটার গেঞ্জি
আণ্ডারপ্যান্ট
এতোগুলো আবরণের তলার
কখন কেমন করে পৌঁছোতে
পারল যে তার হাত দুখানা,
তা মোটেই সে টের পেলো
না।’ এখানে লেখার ends এবং
means মূলত বোঝা সহজ । ওই
উদ্ধৃতিটুকু তুলতে
আমার নিদারুন ঘেন্না
হয়েছে -- কিন্তু এসব
লেখক শুনেছি নাকি
সাহিত্যের বাজারে
একেবারে গরম কেক । আসলে
এদের পেছনে
এসট্যাবলিশমেন্ট আছে --
আপনাদের পেছনে নেই ।
আপনাদের ঢের বন্ধু
সুড়ুৎ করে
এসট্যাবলিশমেন্টে
ঢুকে পড়ে আপনাদের ডেকে
বলছে ‘বেআদব’ ।
আপনাদের ডিফেন্সে মূল
প্রশ্ন হওয়া উচিত : ১ )
আধুনিক জীবনে
ব্যক্তিত্বের
খণ্ডীকরণ মাতৃগর্ভে
প্রত্যাবর্তনের
তৃষ্ণা জাগরুক করতে
পারে, সাক্ষ্য হিসেবে
ভুরি-ভুরি
সমাজতাত্বিকের রচনা
কোট করা যায় । যেমন
সাহিত্য ও সময়ের
দ্বন্দ্বে
ব্যক্তিমানুষের
মনঃরূপায়ণ
ফ্র্যাগমেন্টেশন অফ
পার্সোনালিটি ইত্যাদি,
এবং সামাজিক
এলিয়েনেশন। ক)
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক
সংগঠনের বিপুল বিস্তার
; খ ) সামাজিক পরিবর্তনের
অতি দ্রুতগতি এবং ; গ )
ক্ষমতার মুখোমুখি
অসহায়তা -- ব্যক্তিকে
সত্যই চূর্ন করছে ।
এসট্রেঞ্জ করছে,
স্ট্রেনজার করছে ।
আপনার রচনাকে আমি সবরকম
ওই এসট্রেনজমেন্টের
রূপায়ণ বলে দেখতে
ভালোবাসি । শুভা হল যেন
পিতামহকথনের সত্যযুগ,
গোলডেন এজ -- আধুনিক
সাইকোঅ্যানালিস্টের
কাছে নিশ্চিন্তিবোধের
সিমবায়োটিক রমণী ।
এদিকে অ্যাপ্রোচ করা
ভালো -- এতে আমাদের দেশে
আইন-আদালতে একটা
উদাহরণও স্হাপন করা যায়
। ২ ) অশ্লীলতার সংজ্ঞা
এবং অশ্লীলতা
সম্পর্কিত বাংলা রচনায়
কীভাবে এবং কোথায় দেখা
যাচ্ছে তার উদাহরণসহ
ডিফেন্সে
এসট্যাবলিশমেন্টের
প্রতি চ্যালেঞ্জ
জানানো যায় । ৩ ) আপনাদের
রচনা সাহিত্যকর্মীদের
মধ্যেই একমাত্র বিতরণ
হয় বলে স্বীকৃত ।
আপনাদের সব রচনা তো আমি
পড়িনি । আপনাদের বহু
কার্যকলাপ, যা আমি
লোকমুখে শুনেছি, তা
আমার খুবই অপছন্দ হয়েছে
। সেসব কথা এখন থাক । আমি
৯ জুন আপনার বিচারগৃহে
উপস্হিত থাকার চেষ্টা
করব। ইতিমধ্যে যদি
সম্ভব হয়, আগামী রবিবার
সন্ধ্যায় কফিহাউসে এলে
দেখা হতে পারে। প্রীতি
ও শুভেচ্ছা নিন । আইন ও
মানবতার বিচারে আপনি
মুক্তি পান এই কামনা
করি ।
আমি আপনাকে প্রতিভাবান
বলে মনে করি, যে
প্রতিভার অভাব
চতুর্দিকে বড়ই
প্রকাশিত ।
ইতি আপনাদের
তরুণ
সান্যাল
‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক
ছুতার’ কবিতাটা পড়ে
তরুণ সান্যাল বিশ্লেষণ
করেছেন এবং আদালতে
মামলাটা কেমনভাবে
সাজানো উচিত তার
পরামর্শ দিয়েছেন । এর
প্রেক্ষিতে ৯ নভেম্বর
১৯৬৫, আদালতে সাক্ষ্য
দেবার পর, দাদা সমীর
রায়চৌধুরীকে লেখা
সুনীল গাঙ্গুলির এই
চিঠিটা পড়লে তরুণ
সান্যাল আর সুনীলের
ঔদার্য, দৃঢ়তা,
চরিত্রের পার্থক্য টের
পাওয়া যাবে :
‘সাক্ষীর কাঠগড়ায়
মলয়ের কবিতা আমাকে পুরো
পড়তে দেওয়া হয় । পড়ে
আমার গা রি রি করে । এমন
বাজে কবিতা যে আমাকে
পড়তে বাধ্য করা হল, সে
জন্য আমি ক্ষুব্ধ বোধ
করি -- আমার সময় কম, কবিতা
কম পড়ি, আমার রুচির
সঙ্গে মেলে না -- এমন
কবিতা পড়ে আমি মাথাকে
বিরক্ত করতে চাই না ।
মলয়ের তিনপাতা রচনায়
একটা লাইনেও কবিতার
চিহ্ণ নেই । মলয় যদি
আমার ছোটো ভাই হতো, আমি
ওকে কবিতা লিখতে বারণ
করতাম অথবা গোড়ার অ-আ-ক-খ
থেকে শুরু করতে বলতাম ।
যাই হোক তবু আমি বেশ
স্পষ্ট গলাতেই দুবার
বলেছি ওর ঐ কবিতা আমার
ভালো লেগেছে । এর কারণ,
আমার কোনো মহত্ব নয় --
আমার সাধারণ,
স্বাভাবিক, সীমাবদ্ধ
জীবন । যে কারণে আমি
আনন্দবাজারে
সমালোচনায় কোনো বাজে
বইকে ভালো লিখি -- সেই
কারণেই মলয়ের লেখাকে
ভালো বলেছি।”
তরুণ সান্যাল তাঁর
চিঠিতে
এসট্যাবলিশমেন্টে
সুড়ুৎ করে যাদের ঢুকে
যাবার কথা বলেছেন তাঁরা
হলেন সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায় আর শক্তি
চট্টোপাধ্যায়, তখনই
আনন্দবাজারে যোগ
দিয়েছিলেন । তরুণ
সান্যালের সাক্ষ্যটা
শোনা যাক :
পেশকার : নাম বলুন ।
তরুণ সান্যাল :
তরুণকুমার সান্যাল ।
পেশকার : এই বইটার ওপর
হাত রাখুন আর বলুন, যা
বলব সত্য বলব, সত্য বৈ
মিথ্যা বলব না, কিছু
গোপন করব না ।
তরুণ সান্যাল : যা বলব
সত্য বলব, সত্য বৈ
মিথ্যা বলব না, কিছু
গোপন করব না ।
সত্যেনবাবু ( আমার উকিল )
: তরুণবাবু, আপনি তো
অধ্যাপনা করেন ?
তরুণ সান্যাল : আমি
স্কটিশ চার্চ কলেজে
ইকনমিক্সের অধ্যাপক ।
এছাড়া আমি
সুরেন্দ্রনাথ কলেজে
রাত্রিবিভাগে
পার্টটাইম লেকচারার
হিসাবে ইকনমিক্স ও
স্ট্যাটিসটিক্স পড়াই ।
আমার লেখা অনেক
টেক্সটবুক আছে । আমি
কবিতা ও প্রবন্ধ লিখি,
এবং সেগুলি বিভিন্ন
পত্রপত্রিকায়
প্রকাশিত হয় ।
সত্যেনবাবু : আপনি এই
কবিতাটা পড়ুন । এটা
মেটেরিয়াল এগজিবিট
ওয়ান, ইয়োর অনার ।
তরুণ সান্যাল : জোরে
জোরে পড়ব কি ?
বিচারক অমল মিত্র : না,
মনে-মনে পড়ুন । কবিতাটা
কি আগে পড়েছেন ?
তরুণ সান্যাল : সমস্তটা
না পড়লে ঠিক বলতে পারব
না ।
সত্যেনবাবু : পড়লেন ?
তরুণ সান্যাল : হ্যাঁ,
মনে পড়ে্ছে, আগে
পড়েছিলাম । এই ইশ্যুটা
আমি প্রথম দেখি ‘অমৃত’
পত্রিকার কার্যালয়ে ।
সত্যেনবাবু : পড়ে,
শারীরিক ও মানসিক কোনো
বৈলক্ষণ্য ঘটছে কি ?
তরুণ সান্যাল : না । আমি
তো আপনাদের সামনেই
দাঁড়িয়ে রয়েছি ।
সত্যেনবাবু : পড়বার পর
কোনো সাইকো-সোম্যাটিক
পরিবর্তন অনুভব করছেন
কি ?
তরুণ সান্যাল :
সামান্যতম নয় ।
সত্যেনবাবু : কবিতাটা
কি আপনার অশ্লীল মনে হল
?
তরুণ সান্যাল : অশ্লীল
বলতে আপনি কী মনে করেন ?
সত্যেনবাবু ?
বাংলাভাষায় অশ্লীল বলে
একটা শব্দ আছে ? এখন, সেই
শব্দটার যা অর্থ আপনি
বোঝেন । আপনার সেই
মতামত অনুযায়ী কবিতাটি
অশ্লীল কি না ?
তরুণ সান্যাল : আমার মতে
কবিতাটিকে কোনোক্রমেই
অশ্লীল বলা যেতে পারে
না ।
সত্যেনবাবু : দ্যাটস অল
ইয়োর অনার ।
বীরবাবু ( পাবলিক
প্রসিকিউটার ) : আচ্ছা
মিস্টার সান্যাল, এই যে
আপনি জিগ্যেস করছিলেন,
অশ্লীলতা বলতে কী
বোঝায়, তা এক্ষেত্রে
অশ্লীলতা বলতে আপনি
নিজে কী মনে করেন ?
তরুণ সান্যাল : আমার
মতানুযায়ী অশ্লীলতা
দুই ধরণের । প্রথম যা
ব্যক্তিক, এবং দ্বিতীয়
যা সমষ্টিগত বা সামাজিক
। অশ্লীলতা
ব্যক্তিবিশেষকে
প্রভাবান্বিত করতে
পারে, আবার এমন
অশ্লীলতা আছে যা
সামাজিক ক্ষতি করতে
পারে । যা কিছু
চৈতন্যের অপণয়ন ঘটায়,
তাকেই আমি মূলত অশ্লীল
বলে মনে করব । যদি
ব্যক্তিচৈতন্যের
অপণয়ন ঘটে…
বিচারক অমল মিত্র ( তরুণ
সান্যালকে থামিয়ে ) :
ওয়েল, প্রফেসর, ইউ বেটার
স্পিক ইন ইংলিশ । দিস
বেঙ্গলি সিমস টু বি টু
হার্ড ফর দি কোর্ট ।
তরুণ সান্যাল : থ্যাংক
ইউ মি লর্ড, আমি আরও সহজ
বাংলায় বলার চেষ্টা
করছি ।
বিচারক অমল মিত্র :
ইংরেজিতেই বলুন, তাতে
আমাদের সুবিধে হবে ।
তরুণ সান্যাল : টু মি,
অবসিন মিনস সামথিং হুইচ
কজেজ মেন্টাল
ডিপ্যাভিটি টু অ্যান
ইনডিভিজুয়াল । হোয়েন
সামথিং বিকামস দি কজ অফ
ডিপ্রেভিং দি সোসাইটি
আই উড কনসিডার দ্যাট টু
বি অবসিন ।
বিচারক অমল মিত্র :
হোয়াট ডু ইউ মিন বাই
সোসাইটি ইন দিস
প্রিটেক্সট ? ডু ইউ মিন এ
গ্রুপ অফ পার্সনস ?
তরুণ সান্যাল : ইয়েস,
এগজ্যাক্টলি মি লর্ড ।
বিচারক অমল মিত্র : ইফ ইউ
ফাইন্ড এনি অফ ইয়োর
পিউপিলস ইন দি কলেজ
রিডিং এ পোয়েম অফ দিস
সর্ট, হোয়াট উড ইউ ডু ?
তরুণ সান্যাল : আই ওন্ট
মাইন্ড ।
বিচারক অমল মিত্র :
হোয়াট উড বি দি এফেক্ট
অব দিস পোয়েম অন এ ম্যান
অন দি স্ট্রিট ?
তরুণ সান্যাল : আই ডোন্ট
ফাইন্ড এনি ডিফারেন্স
।
বিচারক অমল মিত্র : ডু ইউ
মিন টো সে দ্যাট দিস
পোয়েম উড হ্যাভ দি সেম
এফেক্ট অন এ ম্যান অন দি
স্ট্রিট অ্যান্ড এ
স্টুডেন্ট অফ থ্রি
ইয়ার্স ডিগ্রি কোর্স ?
তরুণ সান্যাল : ইয়েস, আই
থিংক সো । হি উদ হ্যাভ দি
প্লেজার অব রিডিং এ পিস
অব আর্ট ।
বীরবাবু : আপনি নিজেও কি
এরকম কবিতা লেখেন ?
তরুণ সান্যাল : নিশ্চয়ই
না । এক্সকিউজ মি, এই
পয়েন্টটা আমি একটু
পরিষ্কারভাবে বলতে চাই
।
বীরবাবু : ডাজন্ট
ম্যাটার । ওতেই হবে ।
আপনি কি এরকম কবিতা আরও
পড়েছেন ?
তরুণ সান্যাল :
আমেরিকায় একজন বিখ্যাত
কবি ছিলেন, যিনি এইভাবে
লিখতেন । তাঁর নাম
হুইটম্যান ।
বীরবাবু : আমরা বিদেশের
কথা জানতে চাই না । আপনি
হাংরি জেনারেশনে কখনও
কনট্রিবিউট করেছেন ?
তরুণ সান্যাল : না ।
বীরবাবু : তাহলে
সাবস্ক্রাইব করেছেন ?
তরুণ সান্যাল : কখনোই না
।
বীরবাবু : দ্যাটস অল ।
আমার পক্ষে তরুণ
সান্যাল, সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায় ও
জ্যোতির্ময় দত্তের
সাক্ষ্য সত্ত্বেও
বিচারক আমাকে একমাসের
কারাদণ্ডের আদেশ
দিয়েছিলেন । তিনি আমার
সাক্ষীদের বক্তব্য
গ্রাহ্য করেননি এবং
রাজসাক্ষী ও পুলিশের
সাক্ষীদের বক্তব্যের
ওপর নির্ভর করে সাজা
দিয়েছিলেন । পরে সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায় যে
খ্যাতি পেয়েছিলেন তেমন
নামডাক সেসময়ে থাকলে জজ
সাহেব হয়তো সাজা দিতে
ইতস্তত করতেন । আমি
অবশ্য কলকাতা উচ্চ
আদালতে মামলাটা জিতে
গিয়েছিলুম ।
তরুণ সান্যালের সঙ্গে
পরে আমার দেখা হয়েছে
বেশ কয়েকবার । একবার
একটা সভায় তাঁকে, উত্তম
দাশ আর আমাকে ডাকা
হয়েছিল । দেখলুম যে
তরুণ সান্যাল, যাকে বলে
একাই একশো, অবিরাম
বক্তৃতা দিয়ে গেলেন,
আমাদের আর বলবার বিশেষ
সময় ছিল না ।
তাঁর জ্ঞান আর
পাণ্ডিত্যের কাছে আমরা
ছিলুম লিলিপুট ।
ফেসবুক মন্তব্য