বসন্ত, রং আর সেই দুধরাজ পাখিটা

মিলন চট্টোপাধ্যায়

à¦›à§‹à¦Ÿà¦¬à§‡à¦²à¦¾à §Ÿ হোলি শব্দটা শুনতাম না। বুঝতাম রং খেলা। পনেরদিন আগে থেকেই শুকনো কলাপাতা, দুটো বড় লাঠি যোগাড় করতাম। পাশের বাড়িতে গরু ছিল বলে তক্কে তক্কে থাকতাম কখন বিচুলি আসবে। পাড়ার সব ছোটরা মিলে চুরি করতাম বিচুলি। তারপর ন্যাড়া বানানো হত। একটা মাটির হাঁড়িতে গোল গোল চোখ এঁকে বানানো হত ন্যাড়ার মুণ্ডু। রং খেলার আগেরদিন সন্ধ্যায় কাঁসর বাজিয়ে ঘুরতাম পাড়ায়। হাতে থাকত যেকোনো পাত্র। বাড়ি বাড়ি থেকে আলু, টোম্যাটো, রাঙাআলু ইত্যাদি দেওয়া হত সেই পাত্রে। অনেকে কালিপটকা জমিয়ে রাখত পুজোর সময় থেকেই, সেই পটকা দেওয়া হত ন্যাড়ার ভেতরে সঙ্গে আনাজও। আর একটু রাতে ন্যাড়া পোড়ানো হত তুমুল আনন্দে। সবাই মিলে গোল হয়ে গাইতাম -- ‘আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়ঠ/ কাল আমাদের দোল / পূর্ণিমাতৠচাঁদ উঠেছে / বল হরিবোল’। আশ্চর্য ব্যাপার, ঠিক সেই সময়েই আকাশ জুড়ে গোল রূপোর থালার মত চাঁদ উঠত। ন্যাড়া পুড়ে গেলে সেই আনাজপাতি খুঁজে বের করা হত, তারপর ফুঁ দিয়ে দিয়ে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছুরি দিয়ে কেটে নুন -লংকা দিয়ে মাখা হত। সেই আলুপোড়া, টোম্যাটোপৠ‹à§œà¦¾à¦° মত স্বাদ এজন্মে আর পাব বলে মনে হয় না। পরদিন সকালে একটা বালতিতে রং গুলে দিত বাবা। হালকা রং। পেতলের একটা পিচকারি ছিল আমার, সেই নিয়ে যুদ্ধ শুরু হত। একটু বড় হওয়ার পর টিভিতে কেবল চ্যানেল ( এটাই বলতাম ) এল। সারাদিন নানা সিনেমা চলত। সবথেকে বেশি চলত শোলে। গব্বরের 'হোলি কব হ্যেয়, কব হ্যেয় হোলি?' শুনে কাঁটা দিত গায়ে। ‘হোলি কে দিন / দিল মিল যা তে হ্যেয়’ গান শুনে মনটা আনচান করে উঠত। তবে সবথেকে বেশি মনে পড়ে ‘দাদার কীর্তি’ নামের সেই সিনেমাটির কথা, যেখানে সন্ধ্যা রায় অপেক্ষায় আর ব্যাকগ্রাঠ‰à¦£à§à¦¡à§‡ হেমন্ত মুখোপাধ্যঠ¾à§Ÿà§‡à¦° সুরে একটা কোরাসে শক্তি ঠাকুরের গলায়, অনুপকুমার ‘হোলি আয়ি রে’ গানটা গাইছেন আর শমিত ভঞ্জ বাড়ি ফিরছেন। কী অসামান্য সেই অনুভূতি! আজও এই গানটা শুনলেই ভেতরটা আবিরে আবিরে ভরে ওঠে। রং খেলা মানেই সেই গান, রং খেলা মানেই মায়ের হাতের কষামাংস, বাবার নিপুণ হাতে গুলে দেওয়া সেই রং। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় অযোধ্যা গেছিলাম এক অনুষ্ঠানেॠ¤ তখনও দোল। দিগন্তবিসৠতৃত খেতের মধ্যে দেহাতী মানুষদের তুমুল রং খেলা এখনও যেন চোখে ভাসে। আমাদের সঙ্গে দুজন রান্নার ঠাকুর গেছিলেন, তাদের একজন একটি মেয়েকে রঙের বদলে হলুদ মাখিয়ে দিয়েছিলেন কপালে। সেই নিয়ে চরম বাওয়াল। ওখানে নাকি কুমারি মেয়েদের মাথায় হলুদ দিলে গাওনা মনে করা হয়! অনেক কষ্টে বোঝানো গেছিল সেই মানুষদের। খুব আনন্দ হয়েছিল সারাগায়ে রং মেখে দুধরাজ পাখির খোঁজে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো। সেই পাখি হয়ত কবিতাই ছিল রূপভেদে যাকে আমি আজও খুঁজে বেড়াই পাগলের মত। এরপর বড় হওয়া শুরু আমার। শুরু শৈশব আর কৈশোরকে হারিয়ে যৌবনের কানাগলিতে ঘুরে বেড়ানোর। রং খেলাও ছেড়েছি বহুদিন। সকাল থেকে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকি, বাচ্চারা, বড়রা এসে আবির দিয়ে যায়। ইচ্ছে করে সেই পেতলের পিচকারি নিয়ে দৌড়ে বেড়াই শৈশবের গলিতে। পারি না। স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে থাকি। বাবার হাতে গোলা সেই হালকা রং সেই যে হাতে লেগে আছে এখনও মুছে গেল না। সেই দুধরাজ পাখিটাও দেখা দেয় না। আমি শুধু দাঁড়িয়ে থাকি, জায়গা লাগে না সেই দাঁড়িয়ে থাকায়। এখন বড় হয়ে গেছি, খুব বড়।

ফেসবুক মন্তব্য